দুনিয়াজুড়ে রোমান্টিক গাল-গল্পের অভাব নেই। দেবদাস-পারো, লাইলি-মজনু, জ্যাক-রোজ, রোমিও-জুলিয়েটসহ আরো কতশত কাহিনী আছে তার শেষ নেই। তবে আজকে যেই কাহিনীটা বলবো, এরথেকে খ্যাপাটে প্রেমের গল্প খুব কমই আছে।
কার্ল টেঞ্জলার ছিলেন জার্মানির ড্রেসডেনের বাসিন্দা। ১৯১০ সালে তিনি অস্ট্রিয়াতে যান আবহাওয়াবিজ্ঞান পড়তে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯২০ সালে দেশে ফিরে এসে বিয়ে করেন। এরপর পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়। সেখানে মেরিন হসপিটালে রেডিওলজি টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখানেই দেখা হয় এক কিউবান নারীর সাথে। যার নাম ছিল মারিয়া এলেনা মিলাগ্রো ডি হোয়োস। প্রথম দেখাতেই তার প্রেমে পাগল হয়ে যান টেঞ্জলার। কিন্তু হতাশায় ভেঙ্গে পড়েন যখন জানতে পারেন হোয়োস যক্ষায় আক্রান্ত। তখন যক্ষা ছিল রীতিমত মরণব্যাধি। টেঞ্জলার সব রকম চেষ্টা করে যেতে থাকেন তাকে সাড়িয়ে তোলার জন্য। হোয়োসের বাড়িতে পর্যন্ত গিয়ে তার সেবা করতেন তিনি। বিভিন্ন ধরণের উপহার দিয়ে তাকে ইম্প্রেস করারও চেষ্টা করতেন।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
কিন্তু টেঞ্জলারের এই ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে ১৯৩১ সালে পরলোকে পাড়ি জমান হোয়োস। তিনি মারা যাওয়ার পরে কি ওয়েস্ট সেমেট্রিতে টেঞ্জলার একটি দামী কবর কিনে নেন। এরপর হোয়োসের মরদেহ কবর দিয়ে সুন্দরমতো সমাধি সাজিয়ে তালা মেরে চাবি নিজের কাছে রেখে দেন। টানা দুই বছর তিনি প্রতি রাতে সেই কবরে যেতেন। কিন্তু এরপরেই তার চাকরী চলে যায় এবং তাকে আর সেই কবরে যেতে দেখা যায় না। হুট করে তার এই পরিবর্তনে অনেকেই অবাক হয়। অনেকে আবার ভেবে খুশি হয় যে হয়তো এতদিনে শোক কাটিয়ে উঠতে পেরেছে টেঞ্জলার। কিন্তু আসল ঘটনা কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারে নি তখন।
১৯৩৩ সালের এপ্রিলে টেঞ্জলার হোয়েসের মরদেহটি কবর থেকে বের করে বাড়িতে এনে রাখেন! এ কারণেই তাকে আর কবরস্থানে দেখা যেত না! এরপর তিনি শুরু করেন মৃতদেহের সংরক্ষণ। এজন্য পুরনো একটি প্লেনের মধ্যে মেডিকেল ল্যাব তৈরি করেন। হোয়েসের মরদেহটা অক্ষত রাখার জন্য নিজের তৈরি বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করতে থাকেন। হোয়েসের শরীরে কোট পরান, কাঁচ দিয়ে চোখ বানান, ছোট ছোট কাপড় গুঁজে মাথা ও শরীরের শেপ ঠিক রাখারও চেষ্টা করেন। মাথা ঢেকে রাখতেন পরচুলা দিয়ে। মৃতদেহ থেকে আসা দুর্গন্ধ ঢেকে রাখার জন্য ব্যবহার করতেন পারফিউম, ফুল ও জীবাণুনাশক। চেষ্টা করতেন মোম দিয়ে মুখের অবয়ব ঠিকঠাক রাখার। লাশটিকে তিনি রেখেছিলেন নিজের বেডরুমে। লাশটিকে সাথে নিয়ে মাঝে মাঝে তিনি নাচতেন বলেও জানা গেছে। রীতিমত রোমহর্ষক ব্যাপার-স্যাপার। এরপর কেটে যায় সাত বছর। এরপরেই মানুষের চোখে ধরা পড়তে শুরু করেন তিনি। তাকে নিয়মিত মেয়েদের ড্রেস ও পারফিউস কিনতে দেখে তাদের সন্দেহ আরো বেঁড়ে যায়। এর মাঝেই একদিন লোকাল এক ছেলে তাকে হোয়োসের মরদেহটি নিয়ে নাচতে দেখে ফেলে। সে ভেবেছিল এটি বিশালাকার কোন পুতুল।
১৯৪০ সালে একদিন হোয়োসের বোন
টেঞ্জলারের বাড়িতে আসে। সে সেখানে গিয়ে দেখে তার বোনের মতো দেখতে একটি বিশাল
পুতুল। এরপর সে পুলিশে খবর দেয়। তারপরেই ফাঁস হয়ে যায় টেঞ্জলারের কান্ড। কেউ
বিশ্বাসই করতে পারছিলো না ঘটনাটি।
টেঞ্জলারকে হোয়োসের কবর ডাকাতির দায়ে গ্রেফতার করা হয়। হোয়োসের মরদেহটি পোস্টমর্টেমের পড়ে লোকাল একটি ফিউনেরাল হাউসে রাখা হয়। সেখানে এটি দেখতে আশেপাশের প্রায় ৭০০০ মানুষ জড় হয়। এরপরে মরদেহটি সেই সিমেট্রিতেই অজানা একটি স্থানে কবর দেওয়া হয়, এবং সেটি কাউকে জানানো হয় না। টেঞ্জলারের কোন মানসিক ব্যাধি ধরা পড়ে না। তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। জীবনের বাকি দিনগুলো একাই কাটান তিনি। অনেকে তাকে পাগল প্রেমিক বলে সমবেদনাও জানাতো। ১৯৫২ সালে মারা যান তিনি। মারা যাওয়ার তিন সপ্তাহ পরে তার লাশ আবিষ্কার করে প্রতিবেশীরা।