সোস্যাল মিডিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছিলো ববিতার এই ঘটনা | Babita

Author
0

 


পুরো নাম ফরিদা আক্তার পপি। নাহ, নায়িকা পপির কথা বলছি না। বলছি ৭০ এর দশকে বাংলা সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা ববিতার কথা। সম্প্রতি ৭০ বছরে পা রাখলেন তিনি। ফিরে দেখা যাক তার জীবনের জানা-অজানা কিছু গল্প। 

১৯৫৩ সালে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় জন্ম নেন ফরিদা আখতার পপি। তার বড় বোন সুচন্দা সিনেমা জগতে পা রাখার পরে পরিবারসহ পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় চলে আসে তারা। সেখানেই কৈশোর কাটে তার। বলে রাখা ভালো, তার পরিবারের বেশিরভাগ মানুষই ছিল মিডিয়ার সাথে জড়িত। তার বড়বোন সুচন্দার বিয়ে হয় জনপ্রিয় পরিচালক জহির রায়হানের সাথে। তার ছোটবোন চম্পাও জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন। জনপ্রিয় নায়ক রিয়াজ ছিলেন তার চাচাতো ভাই।


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন


 

ছোটবেলায় সিনেমায় অভিনয় করার ভাবনা কখনো মাথায় আসেনি ববিতার। তার মা ছিলেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। ববিতা ছিলেন তাঁর সহকারী। তাঁর নিজেরও ইচ্ছা ছিল মায়ের মতো চিকিৎসক হওয়ার। ছোটবেলায় ছিলেন খুব দুষ্টু প্রকৃতির। মা সবাইকে বিনা মূল্যে ওষুধ দিলেও মায়ের অনুপস্থিতিতে সবার কাছ থেকে টাকা নিতেন, যা তাঁর মা–ও জানতেন না। এই টাকা জমিয়ে বান্ধবীদের নিয়ে সিনেমা দেখতেন। স্কুল ফাঁকি দিয়ে প্রথম সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন গুলিস্তানের নাজ সিনেমা হলে। সিনেমার নাম ছিল ‘হোটেল সাহারা’।

 

সেভাবে নায়িকা হওয়ার ইচ্ছে না থাকলেও শুটিং দেখার শখ ছিল তাঁর। প্রথম নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘চাওয়া পাওয়া’ ছবির শুটিং দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। জহির রায়হানের ‘সংসার’ সিনেমায় রাজ্জাক-সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেও প্রথমে রাজি হননি। পরে মা ও বোনের পীড়াপীড়িতে অভিনয় করতে রাজি হন। তখন তিনি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন। যদিও পরে সিনেমাটি মুক্তি পায় নি।

 

শিশুশিল্পী হিসেবে সুবর্ণা নাম ব্যবহার করলেও ১৯৬৯ সালে ‘শেষ পর্যন্ত’ সিনেমা দিয়ে ‘ববিতা’ নামে প্রথম নায়িকা হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি। জহির রায়হানের লেখা ‘টাকা আনা পাই’ সিনেমাটি ছিল তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। এরপর কখনো হয়েছেন গোলাপী, আবার কখনো বানু বা জমিদারের কন্যা চাঁদনী। গ্রামীণ কিংবা শহুরে চরিত্র, সামাজিক অ্যাকশন অথবা ফ্যাশনেবল সব ধরনের ছবিতেই সাবলীলভাবে অভিনয় করেছেন তিনি। তার ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য ছবির তালিকায় রয়েছে অরুণোদয়ের অগ্নি সাক্ষী, আলোর মিছিল, গোলাপী এখন ট্রেনে, সুন্দরী, বাদী থেকে বেগম, নয়নমণিসহ বেশকিছু সিনেমা। তবে তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সিনেমা সত্যজিত রায়ের অশনি সংকেত। ববিতাকে দেখার পরে মানিকবাবু বলেন, "আমি অনেক খুশি, আমি "অনঙ্গ বউ" আজকে পেয়ে গেছি।” সিনেমাটি বার্লিন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে গোল্ডেন বিয়ার জেতে। এই চলচ্চিত্রে "অনঙ্গ বৌ" চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক শিল্পীর মর্যাদা লাভ করেন এবং ব্যাপক প্রশংসিত হন। নিউইয়র্ক টাইমস, লন্ডন ও জার্মানির বিখ্যাত নামীদামী পত্রিকার প্রচ্ছদে উঠে আসেন তিনি। রাশিয়াতে রাস্তায় রাস্তায় বিলবোর্ডে উঠেছিল তার ছবি।

 


অশনি সংকেত করার পরে বলিউড থেকেও প্রচুর অফার পান তিনি। কিন্তু সে সময়ে তার দুলাভাই জহির রায়হান নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় বড়বোন সুচন্দা মানসিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাই ববিতা আর বলিউডে পাড়ি জমান নি। তবে সত্যজিত রায়ের সঙ্গে পরবর্তী সময়েও তার ছিল দারুণ সম্পর্ক। তবে দীর্ঘদিন ধরেই সিনেমায় আর দেখা যাচ্ছে না তাকে। বাংলা সিনেমার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। এই মুহুর্তে একমাত্র ছেলে অনিকের সাথে থাকছেন কানাডায়।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!