AI কি মানুষকে ভয়ংকর পৃথিবীর দিকে নিয়ে যাচ্ছে? || Is Artificial Intelligence Dangerous?

Author
0

 


আচ্ছা, আপনি কি এআইকে হুমকি হিসেবে দেখছেন? আপনার কি মনে হয় এআই অদূর ভবিষ্যতে মানবজাতির জন্য ভয়াবহ হয়ে উঠবে?

চ্যাটজিপিটির নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন? যেখানে যে কোন ধরণের প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। ফেলুদার গল্পগুলোতে যেমন ফেলুদার যে কোন বিষয়ে ইনফরমেশন দরকার হলে সিধু জ্যাঠার কাছে চলে যেতেন। চ্যাটজিপিটি অনেকটা সিধু জ্যাঠারই মডার্ন ভার্সন। যাই হোক, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স জিনিসটা আরো অনেকদিন আগে থেকেই ডেভেলপড হতে থাকলেও, বিশ্বজুড়ে মানুষের নজর কাড়ে এই চ্যাটজিপিটি আসার পর থেকেই। গত বছরের নভেম্বরে চ্যাটজিপিটির ৩.৫ ভার্সন বের হওয়ার পরেই হইচই পড়ে যায়। এটি রাতারাতি ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং অনলাইন সার্ভিসে পরিণত হয়। যেখানে ফেসবুকের ১ মিলিয়ন ইউজার হতে লেগেছিল ১০ মাস, ইস্টাগ্রামের লেগেছিল ২.৫ মাস, সেখানে মাত্র ৫ দিনে এক মিলিয়ন ইউজার হয়ে যায় চ্যাটজিপিটির! ইমেইল লেখা, পড়াশোনা রিলেটেড কোন প্রশ্নের দ্রুত উত্তর বের করা থেকে শুরু করে এমনকি গল্প-উপন্যাস পর্যন্ত লিখে ফেলেছে মানুষ এই চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে!



পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



চ্যাটজিপিটি মূলত ‘ওপেনএআই’ নামক একটি কোম্পানির ওয়েবসাইট। তাদের এই সাফল্যের দেখাদেখি গুগল ও মাইক্রোসফট-ও নিয়ে আসে বার্ড ও বিং নামক এআই প্রোগ্রাম। এআই এর ব্যবহার শুধুমাত্র নলেজড বেইজড প্রোগ্রামেই আটকে নেই। ‘মিডজার্নিতে’ আপনি জাস্ট টেক্সট ইনপুট দিলেই মুহুর্তেই সেটা হয়ে যাবে ছবি কিংবা আর্ট। গুগলের ‘মিউজিক এলএম’ এ টেক্সট থেকে বানিয়ে ফেলা যায় যে কোন ধরণের মিউজিক। ‘স্ট্যাবল ডিফিউশনে’ বানাতে পারবেন যে কোন গানের যে কোন ভার্সন। যেমন চাইলেই হানি সিং এর কোন হিপহপ গানকে মুহূর্তেই বদলে ফেলতে পারবেন ভায়োলিন ও বাঁশি ব্যবহৃত ক্লাসিকাল গানে

এছাড়াও আমরা বিভিন্ন ধরণের অফিশিয়াল কাজে, হেলথ অ্যাডভাইজ নেওয়ার ক্ষেত্রে, এমনকি ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবেও এআই ব্যবহার করছি।

এআই এর ভালো দিকগুলোর কথা তো হলো। এবারে খারাপ দিকে নজর দেওয়া যাক। একটা কথা প্রচলিত আছে – “নতুন কোন টেকনোলজি জনপ্রিয় হলে, জব মার্কেটে সেটা হিউজ ইমপ্যাক্ট ফেলে।” যেমন মার্কেটে স্মার্টফোন আসার পরে ‘ল্যান্ডলাইন টেলিফোন অপারেটর’ দের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। গাড়ির প্রচলন ব্যাপক আকারে শুরু হওয়ার পরে ঘোড়ার গাড়ি প্রায় উঠেই গেছে। ঢাকায় সম্ভবত এখন শুধুমাত্র ‘গুলিস্তান থেকে সদরঘাট’ রুটেই ঘোড়ার গাড়ি চলে। তাও সেটা যানবাহনের থেকে বেশি ঐতিহ্য ধরে রাখার তাগিদে। আরো একটি উদাহরণ হতে পারে এটিএম। এটিএম মেশিন চালু হওয়ার পর থেকে ব্যাঙ্ক টেলারদের ভ্যাকেন্সিও অনেকটাই কমে গেছে।

 

প্রথমবারের মতো ক্রিয়েটিভ সেক্টরের জবগুলোও পড়ে গেছে হুমকির মুখে। রাইটার, গ্রাফিক ডিজাইনার, লোগো ডিজাইনার, মিউজিশিয়ানদের কাজগুলো এখন করা যাচ্ছে চ্যাটজিপিটি, মিডজার্নি, মিউজিক এলএম ও স্টেবল ডিফিউশনের মতো প্রোগ্রামগুলো দিয়েই। অ্যামাজন তো রীতিমত এআই দিয়ে লেখা বই বিক্রিরও ঘোষণা দিয়েছে। রিসেন্টলি মার্ভেল তাদের সিক্রেট ইনভ্যাশন সিরিজের ইন্ট্রো সিকুয়েন্সও বানিয়েছে এআই ব্যবহার করে। ডু নট পে নামক একটি এআই দিয়ে আপনি কোর্টে কেসও লড়তে পারবেন। কেস হারলে দেওয়া লাগবে না টাকাও! এই এআই ইতিমধ্যেই ২,৫০,০০০ কেস ফাইট করে জিতেছে ১,৬০,০০০ টি! জারভিস নামক একটি এআই আছে যার মাধ্যমে পাওয়া যায় ব্লগ পোস্ট, নিউজলেটার, অ্যাড কপি থেকে শুরু করে যে কোন ধরণের হাই কোয়ালিটি রিটেন কন্টেন্ট।

এমআইটির একটি রিসার্চে দেখা যায়, ২০২৫ সালের মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রির প্রায় ২ মিলিয়ন জব রিপ্লেস করে ফেলবে রোবটরা। এছাড়াও, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ফিউচার অফ জবস রিপোর্ট ২০২০ অনুযায়ী ২০২৫ এর মধ্যে ৮৫ মিলিয়ন জব চলে যাবে এআই এর কারণে। তবে আশার ব্যাপার হচ্ছে, তাদের মতে ৯৭ মিলিয়ন নতুন জবের সুযোগও তৈরি হবে। তাই এআইকে জব কিলার না বলে বলা উচিত জব ক্যাটাগরি কিলার। এআই ব্যবহারে বেঁচে যাবে সময় ও টাকা। পাশাপাশি কমবে কাজে ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও। ভবিষ্যতে তাই এআই দিয়ে প্রচুর কাজ করা হবে ঠিকই, কিন্তু সেই এআইকে অপারেট করার জন্যেও তো লোক লাগবেতাই এআই টেকনোলজি সম্পর্কে যে যত বেশি জানবে, জব মার্কেটে তাদের ভ্যালু হবে তত বেশি।



এআই ব্যবহারের আরো একটি বাজে দিক হতে পারে পলিটিকাল প্রোপাগাণ্ডা। এর সবথেকে বড় উদাহরণ ২০১৬ সালের ইউএস ইলেকশন ও যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট ইলেকশন। ফেসবুকে পার্সোনালাইজড অ্যাড দেখিয়ে মানুষজনের মগজ ধোলাই করা হয়েছিল। যারা ইনফ্লেশন নিয়ে ভয়ে থাকতো তাদের দেখানো হয়েছিল, যুক্তরাজ্য যদি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যায় তাহলে সবাই প্রতি বছর প্রায় ৯৩৩ পাউন্ড করে সেভ করতে পারবে। কিন্তু পুরো খবরটাই ছিল ফেইক। এরকম ফেইক পার্সোনালাইজড অ্যাডগুলো কাজেও লাগে তাদের পক্ষে। ভোটে দেখা যায় ৫১.৯% মানুষ ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দেয়। অপরদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে থাকার পক্ষে ভোট দেয় ৪৮.১% মানুষ।

ব্যক্তি পর্যায়েও এআই ব্যবহার করে ফ্রড করছেন অনেকেই। মেয়েদের ছবি জেনারেট করে ‘টিন্ডার ক্লোন’ বানানো, ভয়েজ ক্লোন করে অপহরণের নাটক থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার ‘হাই, মাম’ স্ক্যাম অন্যতম আলোচিত এআই স্ক্যান্ডাল। বোঝাই যাচ্ছে, এআইয়ের ব্যবহার আসলে পুরোটাই মানুষেরই হাতে। আপনাদের কি মনে হয়, এআই কি মানুষের জন্য ভয়ংকর কোন ভবিষ্যত নিয়ে আসবে? নাকি নিয়ে যাবে আরো সুন্দর আগামীর দিকে?

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!