একটা প্রবাদ আছে না? জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ। ডিলেমা
কনসেপ্টটার পারফেক্ট একটি উদাহরণ এটি। ডিলেমা হচ্ছে এমন এক সিচুয়েশন, যেখানে আপনার
সামনে এমন দুটি অপশন থাকবে, যেখান থেকে একটি বেঁছে নেওয়া খুবই মুশকিল। সহজভাবে বললে
৫০-৫০ সিচুয়েশন অথবা উভয়সংকট।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
একটি সিচুয়েশন কল্পনা করা যাক। আপনি ফ্যামিলি নিয়ে
বিলাসবহুল এক ক্রুজ শিপে ট্রাভেল করছেন। সাথে আছে আপনার ওয়াইফ এবং মেয়ে। হঠাৎ
ভয়ংকর এক ঝড়ের কবলে পড়ে ক্রুজ শিপটি ডুবতে শুরু করলো। কিন্তু শিপে পর্যাপ্ত পরিমাণ
লাইফজ্যাকেট ছিল না। আপনি ভাগে পেলেন মাত্র দুইটা। তখন আপনি কাকে বাঁচাবেন? আপনার
ওয়াইফ নাকি মেয়েকে? নাকি আপনি নিজেই স্যাক্রিফাইস করবেন তাদের জন্য?
এই ধরণের সিচুয়েশনকেই বলে ডিলেমা। ডিলেমা টার্মটি প্রথম
শোনা যায় ফিফটিন্থ সেঞ্চুরির দিকে। ডাচ ফিলোসফার গ্যাব্রিয়েল নুশেলমান্স ও
ইতালিয়ান রেনেসাঁ হিউম্যানিস্ট লরেঞ্জো ভাল্লার হাত ধরে। তাদের সম্ভাব্য সোর্স ছিল
বাইজ্যান্টাইন গ্রিক ফিলোসফার জর্জ অফ ট্রেবিজন্ড। এরপর স্প্যানিশ স্কলার জুয়ান
লুইস ভিভেসের হাত ধরে সিক্সটিন্থ সেঞ্চুরির শেষ দিকে এই ডিলেমা টার্মটি ব্যাপক
পরিমাণে ছড়িয়ে পড়ে।
চলুন ডিলেমার আরেকটি ক্লাসিক এক্সাম্পল দেখা যাক। সাপোজ
আপনি একজন হোমলেস মানুষ। আপনার পরিবারেও কেউ বেঁচে নেই যে আপনার দায়িত্ব নিবে। এমন
সময় খবর পেলেন আপনার দুঃসম্পর্কের বিরাট বড়লোক এক আত্মীয় মারাত্মক এক
অ্যাক্সিডেন্ট করে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে আছে। তারও তিন কুলে কেউ নেই। যে কারণে
সে মারা গেলে তার সকল সম্পত্তি পেয়ে যাবেন আপনি। এদিকে লাইফ সাপোর্ট থেকে তার
বেঁচে ফেরার সম্ভাবনাও খুবই কম। কিন্তু ডাক্তারের মতে এইভাবে রেখে দিলে পাঁচ বছরও
আইসিইউতে বেঁচে থাকতে পারবে সে। এখন কি করা যায় সেই ডিসিশনও আপনার উপরে। সেই
অবস্থায় আপনি কি ডিসিশন নেবেন? সেই ন্যূনতম আশার উপরে ভরসা রেখে তাকে লাইফ
সাপোর্টে বাঁচিয়ে রাখবেন? নাকি তাকে মেরে ফেলে হোমলেস লাইফ থেকে নিজে ঘুরে
দাঁড়াবেন?
যে দুটো সিনারিওর কথা বললাম, দুই ক্ষেত্রেই কিন্তু ফাইনাল
ডিসিশন নেওয়ার দায়িত্ব আপনার উপরে। এবং হাতে সময়ও খুব কম। এদিকে অপশনও
ফিফটি-ফিফটি। কোনটা ভালো কোনটা খারাপ, কোনটা উচিত কোনটা উচিত না, সেই চিন্তাতেই
আপনার মাথা খারাপ হওয়ার যোগাড়। এই ধরণের পরিস্থিতিকেই বলে ডিলেমা। এক্ষেত্রে
সিচুয়েশন সাধারণত মানুষের পার্সোনাল বিলিফ এবং মোরালিটির উপরে ডিপেন্ড করে।
আমরা পার্সোনাল লাইফে প্রতিনিয়তই এই ধরনের ছোট-বড় অনেক
ডিলেমাতেই পড়ি। যেমন আমরা যারা বইপড়ুয়া, তাদের কমন একটি ডিলেমা হচ্ছে, একটি বই শেষ
হলে এর পরে কোনটি পড়বো? একইভাবে সিনেমাপ্রেমীদেরও মুভি-সিরিজ বাছতে বাছতেই অনেক
সময় চলে যায়। ডিলেমা তাই সার্বজনীন। সব মানুষই কম বেশি ডিলেমাতে পড়ে। তবে
ব্যাপারটা ফ্রিকুয়েন্টলি ঘটতে থাকলে সমস্যা। কারো সাথে যদি এরকম ঘটে, তাহলে বুঝতে
হবে হয়তো তার ডিসিশন মেকিং অ্যাবিলিটি খুবই কম অথবা দুনিয়া সম্পর্কে অভিজ্ঞতা কম।
তবে যারা মোরালিটির ধার ধাঁরে না অথবা মোরালিটির ব্যাপারে খুবই স্ট্রিক্ট, সেই
ধরণের মানুষজন সাধারণত ডিলেমাতে কম পড়ে।
