কালচারাল হেজিমনি কি জিনিস? What is Cultural Hegemony?

Author
0


কথায় আছে, কালচারকে আপনি নিয়ন্ত্রণ করেন, পলিটিক্স আপনা আপনি কুকুর-বিড়ালের মতো আপনার পোষ মেনে যাবে। মানুষকে অন্ধ ও দাস বানিয়ে রাখার এই ধারণাকেই বলা হয় কালচারাল হেজিমনি। অ্যান্টোনিও গ্রামসি (Antonio Gramsci) প্রথম এই থিওরি দেন। কনফ্লেক্সির (ConFlexi) আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু কালচারাল হেজিমনি জিনিসটা আসলে কি?


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



হেজিমনির শব্দের অর্থ আধিপত্য বা কর্তৃত্ব। আগের দিনে রাজা কিংবা নবাবরা প্রজাদের উপরে ডিরেক্ট অত্যাচারের মাধ্যমেই দাপট বজায় রাখতো। বর্তমানেও ইনডিরেক্টলি সেই কাজটাই করা হয়, কালচারাল কিংবা সংস্কৃতির দিক দিয়ে জনগণকে শাসন করার মাধ্যমে। যা নিয়ন্ত্রণ করে প্রভাবশালী লোকজন। এই সিস্টেমে তারা নিজেদের পছন্দ ও আদর্শকে এমনভাবে মানুষের মধ্যে ইনজেক্ট করে দেয় যা সাধারণ মানুষ বুঝতেও পারে না এবং নিজ থেকেই আদর্শ হিসেবে মেনে নেয়।



হেজিমনি থিওরির জনক গ্রামসি মার্ক্সের ভক্ত হলেও তার ম্যাটারিয়েলিজম কিংবা বস্তুবাদী থিওরি মেনে নিতে পারে নি। তার মতে আইডিয়া বা ভাবনাই সবকিছু নির্ধারণ করে। যে কোনো কিছুই এর আওতায় পড়তে পারে। যেমন - লাইব্রেরি, স্কুল-কলেজ, কালচারাল অর্গানাইজেশন, তথাকথিত বুদ্ধিজীবি সমাজ, বিভিন্ন ধরনের ক্লাব এমনকি আর্কিটেকচার কিংবা রাস্তার ডিজাইন অথবা নামও হতে পারে।

তবে হেজিমনির মেইন খেলার জায়গা হচ্ছে মিডিয়া। একদম প্রিন্ট মিডিয়া থেকে শুরু করে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি পর্যন্ত। এভাবে ফ্ললেসলি মানুষের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই কাজে ইনফ্লুয়েনশিয়াল ফিগারদের দরকার পড়ে মডার্ন ডে মীরজাফর-ঘষেটি বেগমদেরকে। এরা আসে মূলত বুদ্ধিজীবিদের ভেতর থেকে। যাদের থাকে বিশাল ফ্যান ফলোয়ার। যারা তাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে।

হেজিমনি যে শুধু লোকাল স্টেজেই হয় তা না। ইটস আ গ্লোবাল গেইম। ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স, বিজনেস, এন্টারটেইনমেন্ট, স্পোর্টস, কালচার সবকিছুতেই রয়েছে এর প্রভাব।



অ্যামেরিকান বুদ্ধিজীবী এরিক ক্লোসা বলেছিল, সমগ্র বিশ্বে ম্যাকডোনাল্ডসের লোগো খ্রিস্টানদের ক্রুশের থেকেও বেশি পরিচিত। এটাকে শুধুই রসিকতা হিসেবে ধরে নেওয়ার উপায় কিন্তু নেই। ফুড হ্যাবিট অনেক বড় একটি ব্যাপার। ম্যাকডোনাল্ডসের মতো রেস্টুরেন্ট চেইনগুলোর মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফুড কালচারে একটা ডমিনেন্স স্থাপন করা সম্ভব। এবং সেটাই করেছে অ্যামেরিকা। অ্যাডিডাস কিংবা কোকাকোলার বেলাতেও সেইম কেইস।

এরকম আরো হাজারো উদাহরণ আছে কালচারাল হেজিমনির। ভারতে যেমন বর্তমান মোদি সরকার ধর্মকে ব্যবহার করেছে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে। হিন্দুদের মধ্যে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে মেজোরিটির ভোট নিয়ে নিয়েছে নিজেদের পক্ষে।



কালচারাল হেজিমনির থেকে ইনফ্লুয়েন্সড হয়ে মানুষ নিজের আসল পার্সোনালিটি ও চিন্তাশক্তি হারিয়ে ফেলছে। যে জিনিসের তার জীবনে আসলে দরকার নেই, সে ভাবছে সেই জিনিসটা তার মাস্ট লাগবে। ইন দ্যাট ওয়ে, সাধারণ মানুষ হয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীদের হাতের পুতুল। বর্তমান দুনিয়া যেখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, এই হেজিমনি কাটিয়ে ওঠা কি আসলেও সম্ভব?

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!