একসময় রিয়াল মাদ্রিদ শুধু বড় বড় সুপারস্টারদের সাইন করতো। সেই ফিলোসফি থেকে সড়ে এসেছে এখনকার মাদ্রিদ। এখন তাদের মনোযোগ ভিনিসিয়াস, রদ্রিগো, ভালভার্দে, চুয়ামেনি, কামাভিঙ্গা, বেলিংহাম, এন্ড্রিক, গুলেরদের মতো ইয়াং ট্যালেন্টদের প্রতি। এই ফিলোসফি ক্লিক করে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
রিয়াল মাদ্রিদ (Real Madrid)...রাজকীয় ক্লাব। আর্চ রাইভাল বার্সা ফ্যানরাও তাদের ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ক্লাব মেনে নিতে বাধ্য হয়। ক্লাব ফুটবলে এতটাই সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে স্পেনের রাজধানীর এই ক্লাবটি। এক সময়ে তারা জিদান, রোনালদো লিমা, ফিগো, বেকহামদের মতো সুপারস্টারদের পরপর সাইন করিয়েছে। আবার একই সিজনে রোনালদো, কাকা, বেঞ্জেমা, জাবি আলোন্সোর মতো সুপারস্টারদেরও সাইন করার রেকর্ড আছে। সেই সময়ে এই ধরণের ঘটনাকে বলা হতো গ্যালাক্টিকো সাইনিং। রিসেন্টলি দেখা যাচ্ছে সেই ফিলোসফি থেকে সড়ে এসেছেন ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্টিনো পেরেজ।
গত বেশ কয়েকটি ট্রান্সফার
উইন্ডোতে শুধুই ইয়াংস্টার সাইন করছে রিয়াল। যার মধ্যে আছে ভিনিসিয়াস জুনিয়র,
রদ্রিগো, এডার মিলিটাও, ফেদে ভালভের্দে, কামাভিঙ্গা, চুয়ামেনির মতো এক্সাইটিং ইয়াং
প্লেয়াররা। এই সিজনে তাদের সাথে আরো অ্যাড হয়েছে বেলিংহাম, এন্ড্রিক,
আর্দা গুলের, ফ্র্যান গার্সিয়ারা। হুট করে এই পরিবর্তনের কারণ কি? ফিন্যান্সিয়াল
ব্যাপার-স্যাপার এখানে গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ট্রান্সফার মার্কেটে সুপারস্টার
ফুটবলারদের দাম রীতিমত আকাশচুম্বী। সেক্ষেত্রে মিডেল ইস্টের মালিকানাধীন ম্যান
সিটি, পিএসজি, নিউক্যাসেলের মতো টিমগুলোর সাথে কম্পিট করা বাকিদের জন্য বেশ কঠিন
হয়ে উঠেছে। যদিও রিয়াল মাদ্রিদের প্রতি প্লেয়ারদের আকর্ষণ অনেক বেশি। তবুও করোনা
পরবর্তী সময়ে ফুটবল ওয়ার্ল্ডের ইকোনমি যে পরিমাণে ধাক্কা খেয়েছে, সেটিও প্রভাবক
হিসেবে কাজ করতে পারে মাদ্রিদের এই ফিলোসফিকাল চেঞ্জের পেছনে। এবং সেটা যে কাজে
দিয়েছে তা বলাই যায়। বার্সার মতো টিম যেখানে ফিন্যান্সিয়ালি ধুঁকছে, বিভিন্ন লেবার
বিক্রি করা লাগছে টিকে থাকতে...সেখানে মাদ্রিদের সেই ধরণের কোন সমস্যায় পড়তে হয় নি
এখনো পর্যন্ত।
গ্যালাক্টিকো থিওরি থেকে সরে আসার পেছনে হ্যাজার্ডের সুপার ডুপার ফ্লপ হওয়াও আরেকটি কারণ হতে পারে। রোনলদোর রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে ১১৫ মিলিয়নের বিশাল অঙ্কে সাইন করা হ্যাজার্ড ৪ সিজন মিলিয়ে সবেমাত্র ৫৪ ম্যাচ খেলে গোল দিয়েছেন গুণে গুণে ৪ টি! মাদ্রিদের ইতিহাসেরই সবথেকে বড় ফ্লপ সাইনিং ছিলেন সম্ভবত হ্যাজার্ড।
আরও একটি কারণ থাকতে পারে। পাপা পেরেজর ভিশন হয়তো একদম তরুণ একটি স্কোয়াড তৈরি করে বেশি সময় ধরে ওয়ার্ল্ড ফুটবল ডমিনেট করা। মাদ্রিদের এখন যেই মিডফিল্ড আছে, আগামী এক দশক মিডফিল্ডে কাউকে না কিনলেও দিব্যি চলে যাবে। অভিজ্ঞ মড্রিচ-ক্রুসদের সাথে তরুণ বেলিংহাম, ভালভার্দে, কামাভিঙ্গা, চুয়ামেনি, সেবায়োস, গুলের, ব্রাহিম ডিয়াজ। ওয়ার্ল্ড ফুটবলের অন্য যে কোন ক্লাবের জন্য ঈর্ষনীয় মিডফিল্ড।
এবারে যদি অ্যাটাকের দিকে দেখি...ভিনিসিয়াস জুনিয়র, রদ্রিগোর মতো বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা তরুণ অ্যাটাকাররা যেমন আছেন, তেমনি ফিউচার প্রস্পেক্ট হিসেবে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার এন্ড্রিক এবং উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার আলভারো রদ্রিগেজও আছে। তবে প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে এই সিজনেই বেঞ্জেমার রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে আসছেন ফ্রেঞ্চ সুপারস্টার কিলিয়ান এমবাপ্পে। দেখা যাক এমবাপ্পে সাগার শেষ কোথায় হয়।
মিডফিল্ড ও অ্যাটাক নিয়ে তো খুবই গুণগান গাওয়া হলো। কিন্তু আসল সমস্যা তো ডিফেন্সে। বিশ্বসেরা থিবো কোর্তোয়া থাকায় গোলকিপার পজিশন নিয়ে কোন উদ্বেগ নেই। কিন্তু অবাক করার মতো ব্যাপার হচ্ছে, ডিফেন্স নিয়ে ইদানিং মাদ্রিদ খুবই উদাসীন। ফ্রিতে ডেভিড আলাবা কিংবা টনি রুডিগারের মতো টপ ক্লাস প্লেয়ারদের এনেছে ঠিকই, কিন্তু তরুণ কোন প্রস্পেক্টের প্রতি আগ্রহই দেখাচ্ছেন না পেরেজ। লেফট ব্যাকে এবার বাই ব্যাক ক্লজে ফ্র্যান গার্সিয়াকে ফিরিয়ে আনলেও বাকি পিজশনগুলো নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা দেখা যাচ্ছে না। যদিও দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। গত সিজনেই ডিফেন্সের কারণে বেশ ভালোভাবে ধুঁকতে হয়েছে মাদ্রিদিস্তাদের। তিন তরুণ সেন্টারব্যাক জস্কো ভার্দিওল, পাউ টোরেস ও আন্তোনিও সিলভার সাথে রিউমার ছিল। তবে সেগুলোর কোনটাই সত্যি হয় নি শেষমেশ।
সেন্টার ব্যাক পজিশন তাও হয়তো
মিলিটাও-আলাবা-রুডিগার-ন্যাচো-ভ্যালেহোদের দিয়ে চালিয়ে নেওয়া যাবে আরো ১-২ সিজন।
কিন্তু মাদ্রিদের সিরিয়াস সমস্যার জায়গা এখন রাইট ব্যাক পজিশন। কারভাহাল এখন আর
চলে না। গত ২-৩ সিজন ধরেই তার গড়পড়তা পারফর্ম্যান্স চলছেই। তবুও কোন এক আশ্চর্য
কারণে মাদ্রিদ ম্যানেজমেন্ট তাকে রিপ্লেস করার কথাও ভাবছে না! এর থেকেও ভয়ংকর
ব্যাপার হচ্ছে তার প্রপার কোন ব্যাকআপও নেই। অদ্রিওজোলা থাকলেও তাকে না খেলিয়ে
রাইট উইঙ্গার লুকাস ভাস্কেজকে রাইট ব্যাকে নামানো হয়। সব মিলিয়ে মাদ্রিদের রাইট
ব্যাক পজিশন নিয়ে তামাশাই চলছে আসলে। ফ্যানরা চাচ্ছে ক্যান্সেলো, ফ্রিমপং কিংবা
হাকিমির মতো এক্সাইটিং কোন ইয়াংস্টারকে সাইং করানো হোক। দেখা যাক সেই চাওয়া কবে
পূরণ হয়।
মোট কথা ডিফেন্স বাদ দিলে বাকি পজিশনগুলো নিয়ে মাদ্রিদের প্ল্যানিং চমৎকার। তাই ডিফেন্স সর্ট আউট করতে পারলে, গ্যালাক্টিকো থিওরি থেকে সড়ে আসা তারুণ্যনির্ভর এই মাদ্রিদ জিদানের বিখ্যাত ‘থ্রি পিট’ এরার পরে আরো একবার ওয়ার্ল্ড ফুটবলকে ডমিনেট করার সম্ভাবনা প্রবল।
ধরলাম আগামী সিজনের মধ্যে এমবাপ্পে ও ফ্রিমপং-কে কিনলো মাদ্রিদ। তাহলে তাদের ভবিষ্যত বেস্ট ইলেভেন কেমন হয় দেখে নেওয়া যাক।
- গোলপোস্টে কোর্তোয়া।
- ডিফেন্সে ফ্রিমপং, মিলিটাও, রুডিগার ও গার্সিয়া।
- মিডে চুয়ামেনি, ভালভার্দে ও বেলিংহাম।
- অ্যাটাকে রদ্রিগো, এমবাপ্পে ও ভিনিসিয়াস।
বেঞ্চে আরো থাকছে আলাবা, কামাভিঙ্গা, সেবায়োস, ব্রাহিম, এন্ড্রিক, জোসেলুর মতো স্টার প্লেয়াররা। কার্লো আঞ্চেলত্তি যাওয়ার পরে এই টিম যদি নাগেলসম্যান কিংবা জাবি আলোন্সোর মতো কোচের হাতে পড়ে, ফুটবল বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।