একদিকে নড়াইলের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত মাশরাফি। অন্যদিকে রাজনীতির ময়দানে নতুন এসে অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতা সাকিবের। ঐদিকে আবার রাজশাহীতে একের পর এক বিতর্কিত কাণ্ড করে আলোচনায় মাহিয়া মাহি! গুটিকয়েক তারকাই গরম করে রেখেছেন নির্বাচনের ময়দান।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার আশায় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন প্রায় দুই ডজন জনপ্রিয় তারকা। তাদের মধ্য থেকে কেউ বাদ পড়েছেন দল থেকে, সেখান থেকেই আবার কেউ নির্বাচনে পার্টিসিপেট করার ঘোষণা দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের ময়দানি লড়াইয়ে নামছেন ৮ জন তারকা।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
নাম্বার এইট – ডলি
সায়ন্তনী
নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অর্থাৎ
বিএনএমে যোগ দিয়েছেন সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী। এই দলের হয়েই তিনি পাবনা ২ আসনে
নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনি প্রচারণায় গান গেয়ে মানুষজনের কাছে ভোট চাচ্ছেন
তিনি। তার মতে ঠিকঠাক ভোট হলে তিনিই বিপুল পরিমাণ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন। পাবনা-২
আসনে তার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের আহমেদ ফিরোজ কবির।
নাম্বার সেভেন –
নকুল কুমার বিশ্বাস
কয়েক মাস আগে কণ্ঠশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস বঙ্গবীর কাদের
সিদ্দিকীর বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগে যোগ দেন। এর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন
করার ঘোষণা দেন। গামছা প্রতিকের হয়ে বরিশাল-২ আসনের হয়ে লড়তে যাচ্ছেন তিনি।
ইতিমধ্যেই নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছেন তিনি। গানের সুরে সুরে
প্রচারণা চালিয়ে এরই মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। মানুষজনের এরকম সাড়া পেয়ে নকুল
কুমার বিশ্বাস নিজেও খুশি।
নাম্বার সিক্স –
মাহিয়া মাহি
শুরুতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে লড়তে
চেয়েছিলেন অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি। কিন্তু তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয় নি। এই আসনে নৌকার
মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি জিয়াউর রহমান। পরে তাই মাহি সিদ্ধান্ত নেন রাজশাহী ১
গোদাগাড়ী আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার।
মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় মাহি বলেছিলেন, ‘আমাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বললে আমার কষ্ট লাগে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
কেউ যেন নির্বাচন না করে তাই আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।’
ইতিমধ্যেই নির্বাচনি প্রচারণায় তার কান্ড-কারখানা সোশ্যাল
মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে পড়ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমালোচনার মুখই দেখতে হচ্ছে তাকে।
রাজশাহী ১ আসনে তার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক
চৌধুরী।
নাম্বার ফাইভ – ফেরদৌস
আহমেদ
ঢাকা-১০ আসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসনে এবার আওয়ামী লিগের
প্রার্থী হিসেবে নমিনেশন পেয়েছেন অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ। এর আগে ঢাকা-১৭ আসনের
উপনির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু সে সময় দল তাকে
নমিনেশন দেয়নি। তবে এবারে নমিনেশন তো পেয়েছেনই, তার আসনে খুব একটা প্রতিযোগিতাও
নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে জেতার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে তার।
নাম্বার ফোর – মমতাজ
বেগম
আওয়ামী লীগ থেকে আবারও নমিনেশন পেয়েছেন কণ্ঠশিল্পী ও
বর্তমান সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। আরো একবার মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে লড়বেন তিনি। এর
আগে ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে নমিনেশন পেয়েছিলেন। ২০১৮
সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন।
তবে এবার তার অবস্থান খুব একটা সুবিধার না। নিজের পরিবারই
তাঁর পাশে নেই। তার তিন সৎবোন তাকে সমর্থন না করে, সমর্থন করছেন স্বতন্ত্র
প্রার্থী শিল্পপতি দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুকে।
নাম্বার থ্রি – সাকিব
আল হাসান
মাগুরা-১ থেকে লড়ছেন সাকিব আল হাসান। ক্রিকেটের অলরাউন্ডার
প্রথমবারের মতো রাজনীতির মাঠে নেমেও এগিয়ে আছেন। তার আসনে একের অধিক প্রতিপক্ষ
থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে শেষ পর্যন্ত তার জেতার সম্ভাবনাই বেশি। ভোর থেকে রাত
পর্যন্ত প্রচারণা করে যাচ্ছেন তিনি। যদিও জনসাধারণের থেকে মিক্সড ফিডব্যাক
পাচ্ছেন। অনেকে বলছেন তাকে নাকি জীবনেও কখনো মাগুরার কোনো কাজেই দেখেন নি তারা।
আবার অনেকে এত বড় তারকাকে সামনে পেয়েই খুশি। তাকে নিয়ে একটি টক শোতে জাতীয় পার্টির
চেয়ারপার্সন আন্দালিব রহমান পার্থর করা একটি মন্তব্য বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে,
“আল্লাহ তাআলা সাকিব আল হাসানকে সব কিছুই দিয়েছেন, শুধুমাত্র নৈতিকতা ছাড়াই।”
নাম্বার টু –
আসাদুজ্জামান নূর
নীলফামারী-২ আসন থেকে আরো একবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন
পেয়েছেন কিংবদন্তি অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর। এর আগে ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর
মন্ত্রীসভায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। এবারও
ধারণা করা হচ্ছে তিনিই জিতবেন।
নাম্বার ওয়ান – মাশরাফি
বিন মর্তুজা
এই মুহূর্তে দেশের সবথেকে জনপ্রিয় নেতাদের একজন তিনি। মাত্র
একবার নির্বাচিত হয়েই জয় করে নিয়েছেন নড়াইলের জনসাধারণের মন। এমনকি আওয়ামি লিগের
বাইরে দলমত নির্বিশেষে অন্য দলের সমর্থকরাও তার পক্ষে কথা বলছে। যা বাংলাদেশের
রাজনীতিতে বিরল এক ঘটনা।
নড়াইল-২ আসনে প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাবেক এই
ক্রিকেটার। এই আসনে জাতীয় পার্টি ও ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী থাকলেও জনপ্রিয়তার
বিচারে মাশরাফীর ধারেকাছেও নেই তারা। ফলে এই আসনে তার জয় অনেকটাই সুনিশ্চিত। গত ৫
বছরে স্থানীয়দের কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন তিনি। নিয়মিত সাধারণ মানুষের কাছে
গিয়েছেন, তাদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। অতি সাধারণ একজন হয়েই মিশেছেন সবার সাথে। তাই
ক্রিকেটের পরে রাজনীতির মাঠেও তার এই বিপুল জনপ্রিয়তা।