সুমাত্রা ইন্দোনেশিয়ার সুন্দা দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্ভুক্ত একটি দ্বীপ। ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপ হিসেবে এটি বৃহত্তম। সুমাত্রার আয়তন ৪,৭৩,৪৮১ বর্গ কিলোমিটার এবং পৃথিবীর দ্বীপগুলোর মধ্যে এটি আয়তনের দিক থেকে ৬ষ্ঠ। সংশ্লিষ্ট ছোটখাটো দ্বীপের অধিবাসীসহ সুমাত্রার জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। সুমাত্রায় মানব বসতির শুরু খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দে। ১২৯২ সালে বিখ্যাত পর্যটক মার্কো পোলো সুমাত্রা ভ্রমণ করেন। দ্বীপটি বিখ্যাত শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের কেন্দ্র ছিল। ১৭ শতাব্দীতে ইংরেজরা ও ১৮ শতাব্দীতে ওলন্দাজরা দ্বীপটিতে উপনিবেশায়ন শুরু করে। ১৯৪৫ সালে নেদারল্যান্ডস ইস্ট ইন্ডিজের অংশ হিসাবে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে স্বাধীনতা লাভ করে। বর্তমানে এ দ্বীপের প্রায় ৮৭% মানুষ মুসলিম। ইন্দোনেশিয়ার মোট জনসংখ্যার ২২% এখানে বাস করে।
সুমাত্রার জীববৈচিত্র্য বিস্ময়করভাবে সম্বৃদ্ধ। এখানে ২০১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণি ও ৫৮০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। সুমাত্রান বাঘ, সুমাত্রান গন্ডার, সুমাত্রান ওরাংওটাং, সুমাত্রান হাতি, সুমাত্রান স্থল কোকিল, টাপানুলি ওরাংওটাংসহ অসংখ্য প্রাণীর চারণভূমি এই দ্বীপ। এছাড়াও এই দ্বীপ বিস্তৃত পরিসরে উদ্ভিত দ্বারা আবৃত। উদ্ভিতের প্রায় ১৭ টি স্থানীয় বংশের আবাসস্থল এটি। সুমাত্রান পাইন, রাফ্লিজা আর্নল্ডি ও টাইটান অ্যারামের মতো অনন্য প্রজাতি রয়েছে এই দ্বীপে। এছাড়াও এই দ্বীপে প্রায় ৩০০ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ ও ৯৩ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে।
এবার সুমাত্রা দ্বীপের অদ্ভুত এই প্রাণিগুলোর দিকে আরেকটু ভালোমতো আলোকপাত করা যাক। আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হবে সুমাত্রার ঘন রেইন ফরেস্টে, যেখানে আমরা খুঁজে পাবো ম্যাগনিফিসেন্ট সুমাত্রান ওরাংওটাং। এই বুদ্ধিমান প্রাইমেটরা গাছে বসবাসকারী দুনিয়ার সবথেকে বড় প্রাণী। তারা তাদের স্বতন্ত্র লালচে-বাদামী পশম এবং লম্বা বাহুর দ্বারা গাছের উপরের জীবনের সাথে দারুণভাবে খাপ খাইয়ে নেয়। ওরাংওটাং-রা দারুণ ক্ষীপ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে। গাছের শাখা থেকে শাখায় সাবলীলভাবে দুলতে পারে।
আমরা যখন সুমাত্রার হৃদয়ের আরেকটু গভীরে প্রবেশ করি, তখন আমরা বিশ্বের সবচেয়ে রাজকীয় শিকারী সুমাত্রান বাঘের দেখা পাই। এর
আকর্ষণীয় কমলা কোট ও গাঢ় ডোরা শক্তি এবং করুণার সত্যিকার প্রতীকরূপে ফুটে উঠে।
দুঃখজনকভাবে এই চমৎকার প্রাণীটিও রীতিমত বিপন্ন। সংখ্যায় মাত্র কয়েকশ বেঁচে আছে। তাদের
বাসস্থান রক্ষা করা এবং অবৈধ শিকারের বিরুদ্ধে লড়াই করা তাদের বেঁচে থাকার জন্য
খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের পরবর্তী অদ্ভুত প্রাণী অনন্যসাধারণ পাখি রাইনোসেরোস হর্নবিল। এই অসাধারণ প্রজাতিটি একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে - এটির বিলের উপরে একটি বড়, শিং-এর মতো ক্যাস্ক রয়েছে। তারা সাধারণত যোগাযোগের জন্য এবং সঙ্গীদের আকৃষ্ট করার জন্য এই ক্যাস্ক ব্যবহার করে। সুমাত্রার গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্টে পাওয়া এই হর্নবিলগুলি বাস্তুতন্ত্রের সামগ্রিক স্বাস্থ্যে অবদান রেখে বীজ ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্বের সবচেয়ে অদ্ভুত এবং বিষধর সাপগুলির একটির সাথে মুখোমুখি হওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন - সুমাত্রান অরেঞ্জপিট ভাইপার। যেটি তার প্রাণবন্ত কমলা রঙের জন্য পরিচিত। এই সাপটি শক্তিশালী বিষের অধিকারী এবং নির্ভুলতার সাথে তার শিকারকে বশ করে ফেলতে পারে। বিষাক্ত প্রকৃতির হওয়া সত্ত্বেও, এই সাপটি সুমাত্রার জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
লাস্ট বাট নট লিস্ট, আমরা অবিশ্বাস্য সুমাত্রান হাতিদের
উপেক্ষা করতে পারি না। তারা আফ্রিকান হাতিদের চেয়ে আকারে ছোট। এই ভদ্র দৈত্যরা
অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং অসাধারণ সামাজিক আচরণ প্রদর্শন করে। দুর্ভাগ্যবশত, বাসস্থানের ক্ষতি এবং শিকারের কারণে তাদের জনসংখ্যা নাটকীয়ভাবে হ্রাস
পেয়েছে। তাদের বেঁচে থাকা এবং সুমাত্রার বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণ নিশ্চিত করার
জন্য সংরক্ষণ প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।