ওপার বাংলায় মুক্তি পেয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী জয়া আহসানের নতুন সিনেমা ‘অর্ধাঙ্গিনী’। মুক্তির পর বক্স অফিসে দারুণ সাড়া ফেলেছে এই সিনেমাটি। মুক্তির ১০ দিনে প্রায় ১ কোটি ৯৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকার বেশি আয় করেছে সিনেমাটি।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
‘জয়া আহসান’ (Joya Ahsan) ১ জুলাই ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশের ঢাকায় একটি মুসলিম পরিবারের জন্ম গ্রহণ করেন। জয়া আহসান মডেলিং দিয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। তিনি একটি ক্যালেন্ডারের জন্য মডেল হিসাবে কাজ করেন যা বাংলাদেশী অভিনেতা এবং পরিচালক আফজাল হোসেনের নজর কাড়ে। পরবর্তী সময়ে আফজাল হোসেন ‘জয়া’কে কোকা-কোলার বিজ্ঞাপনে কাজ করার প্রস্তাব দেন এবং ১৯৯৭ সালে তিনি কোকা-কোলার এই টিভি বিজ্ঞাপন দিয়ে টেলিভিশনে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর তিনি শহিদুল হক রচিত ‘পঞ্চমী’ টিভি নাটক দিয়ে তার অভিনয় জীবন শুরু করেন। মডেল হিসাবে কর্মজীবন শুরু করার পর তিনি অনেক টিভি নাটক এবং ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। লাবন্য প্রবাহ, শঙ্খবাস, হাঁটকুরা, চৈতা পাগল, তারপরও আঙুরলতা নন্দকে ভালোবাসে এর মতো টিভি ধারাবাহিক এবং নাটকে তার অভিনয় তাকে অভিনেত্রী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে। এরপর ২০১০ সালে নুরুল আলম আতিকের পরিচালনায় ‘ডুবসাঁতার’ চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন।
২০১১ সালে তিনি নাসিরুদ্দিন ইউসুফের পরিচালনায় ‘গেরিলা’
চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদের সাথে অভিনয় করেন। সৈয়দ শামসুল হক রচিত ‘নিশিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস অবলম্বনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনার ওপর নির্মিত হয় এই চলচ্চিত্রটি। চলচ্চিত্রে তার অভিনয় দর্শকের মন ছুঁয়ে যায় এবং চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে সফল হয়। চলচ্চিত্রটি দশটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান, যেখানে তিনি সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান।
২০১২ সালে রেদোয়ান রনির পরিচালনায় একটি অ্যাকশন থ্রিলার চলচ্চিত্র ‘চোরাবালি’
তে তিনি একজন সাংবাদিক ‘নবনি আফরোজ’ চরিত্রে অভিনয় করেন এবং চলচ্চিত্রটির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসাবে তার দ্বিতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
২০১৩ সালে তিনি অরিন্দম শীলের পরিচালনায় ‘আবর্ত’ চলচ্চিত্র দিয়ে ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন। চলচ্চিত্রটিতে তিনি ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা আবীর চ্যাটার্জী এবং টোটা রায় চৌধুরীর সাথে অভিনয় করেন। এই একই বছর তিনি আরো একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’ তে প্রথমবার বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা শাকিব খানের সাথে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে ১০০ দিন চলেছিল এবং খুব ভালো ব্যাবসা করে। ২০১৬ সালে চলচ্চিত্রটির সিকুয়াল ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী টু’ মুক্তি পায় এবং এটি ২০১৬ সালের সবচেয়ে বেশি আয় করা চলচ্চিত্রের মধ্যে একটি।
২০১৫ সালে তিনি অনিমেষ আইচ এর পরিচালনায় বাংলাদেশী চলচ্চিত্র ‘জিরো ডিগ্রী’ তে অভিনয় করেন এবং তৃতীয়বারের জন্য তিনি বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। এই বছর তিনি সৃজিত মুখার্জীর পরিচালনায় ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র ‘রাজকাহিনী’ তে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটিতে তিনি অনেক জনপ্রিয় ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের অভিনেতা অভিনেত্রীদের সাথে অভিনয় করেন যেমন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, সোহিনী সরকার, পার্নো মিত্র, প্রিয়াঙ্কা সরকার, সায়নী ঘোষ, ঋদ্ধিমা ঘোষ, আবীর চ্যাটার্জী, কৌশিক সেন, রজতাভ দত্ত এবং আরো অনেকে।
২০১৭ সালে তিনি কৌশিক গাঙ্গুলীর পরিচালনায় ‘বিসর্জন’
চলচ্চিত্রে তিনি আবীর চ্যাটার্জীর সাথে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রে তার অভিনয় মানুষের মন ছুঁয়ে যায় এবং সেরা অভিনেত্রীর অনেক পুরস্কার পান। ২০১৯ সালে চলচ্চিত্রটির দ্বিতীয় পার্ট ‘বিজয়া’ তেও আবীর চ্যাটার্জীর সাথে অভিনয় করেন।
২০১৮ সালে তিনি সাইফুল ইসলাম মান্নুর পরিচালনায় বাংলাদেশী চলচ্চিত্র ‘পুত্র’ তে ফেরদৌস আহমেদের সাথে অভিনয় করেন। ছবিটি সেই বছরে বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার পান। এই বছরে তিনি অনম বিশ্বাসের পরিচালনায় আরো একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র ‘দেবী’ তে অভিনয় করেন চঞ্চল চৌধুরী এবং শবনম ফারিয়ার সাথে। এই একই বছরে তিনি আরো দুটি ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন একটি সৃজিত মুখার্জী পরিচালিত ‘এক যে ছিল রাজা’ তে অভিনয় করেন যীশু সেনগুপ্ত, অনির্বান ভট্টাচার্য, অপর্ণা সেন, অঞ্জন দত্তের সাথে। অপরটি বিরসা দাশগুপ্ত পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ক্রিসক্রস’ এ অভিনয় করেন নুসরাত জাহান, মিমি চক্রবর্তী, সোহিনী সরকার, প্রিয়াঙ্কা সরকারের সাথে।
চলচ্চিত্র ছাড়াও তিনি ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছেন ২০১৯ সালে ভারতীয় ওটিটি হইচই তে পাঁচফোড়ন ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেন।