ইংল্যান্ডে রাজা স্টিফেন এর শাসনামলে শরতের এক সকালের গল্প। ইংল্যান্ডের সাফোক কাউন্টির উল্পিট এলাকার গ্রামবাসী কাজ করছিলেন মাঠে ফসলের ক্ষেতে। তাদের শস্যক্ষেতের পাশেই জঙ্গল। সেই জংগলের ভয়াবহ সব কাহিনী লোক মুখে প্রচলিত। সেখানে থাকে হিংস্র নেকরে হায়না ও ভাল্লুকের দল। ভুলেও কেউ কখনো সেই জঙ্গলের রাস্তা মাড়ায় না। তো সেই দুপুরে সবাই কাজের ফাকে হঠাত দেখলো ওই জঙ্গল থেকেই বেরিয়ে আসছে দুটো ফুটফুটে শিশু। শিশু দুটিকে দেখে গ্রামবাসী আতংকে আতকে উঠেছিলো। সবাই সকল কাজ ফেলে চিৎকার করে দৌড়ে এসে ঘিরে ধরেছিলো শিশু দুটিকে। কারন কী? শিশু দুটির কী এমন অস্বাভাবিকতা ছিলো?
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
গ্রামবাসীরা কেউই জীবনে এমন
আজব শিশু দেখেনি। তাদের শারীরিক গঠন স্বাভাবিক মানুষের মতোই শুধু তাদের গায়ের রঙ ছিলো
সবুজ। আমরা জানি গাছের পাতা সবুজ হয় ক্লোরোফিলের কারনে। আর মানুষের চামড়া বাদামী হয়
মেলানিনের কারনে। কিন্তু মানুষের শরীরেতো ক্লোরোফিল থাকার কথা না। তাহলে তাদের গায়ের
রঙ সবুজ কেনো?
শিশু দুটির একজনের বয়স নয়
বছর অপরজনের মাত্র সাত। তাদের গায়ে ছিলো অদ্ভুত অন্যরকম পোষাক। উল্পিট গ্রামের মানুষ
এর আগে কখনোই এমন মানুষ বা এমন পোষাক পরা কাউকে দেখেনি কোনকালেই। তাদের দৌড়ে আসা দেখে
শিশু দুটি ভয় পেয়ে পাথরের পেছনে গিয়ে লুকিয়ে ছিলো।
কেউ কেউ বলেছিলেন শিশুদুটি শয়তানের ছেলে মেয়ে, তাদের মেরে ফেলা উচিত। তীর ধনুক নিয়ে প্রস্তুত হয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেই মুহুর্তে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন গ্রামেরই এক মাঝবয়সী মহিলা। ভয়ে কাঁপতে থাকা শিশুদুটিকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। হাতে থাকা কাস্তে দেখিয়ে মহিলা হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন গ্রামবাসীদের। বলেছিলেন শিশুদুটিকে মারতে এলে মরতে হবে। মহিলাটির রুদ্রমূর্তি দেখে পিছিয়ে গিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। বুকে আগলে শিশুদুটিকে মহিলা নিয়ে এসেছিলেন নিজের বাড়ি। অদ্ভুত দর্শন শিশুদুটিকে ভীষণ ক্ষুধার্ত এবং ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। মহিলা তাদের খাবার দিয়েছিলেন। কিন্তু শিশুদুটি খেতে চায়নি। খাবার হাতে নিয়ে একবার শুঁকে হাত থেকে নামিয়ে রেখেছিল। শিশুদুটি কী একটা দুর্বোধ্য ভাষায় কথা বলছিল। যা গ্রামবাসীদের কেউ বুঝতে পারছিলেন না। অগত্যা মহিলাটি শিশুদুটিকে নিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় জমিদার স্যার রিচার্ড ডি কেন-এর বাড়ি। জমিদারের লোকেরা বিভিন্ন খাবার শিশুদুটির সামনে এনে রেখেছিলেন, যেটা পছন্দ সেটা যদি খায়। কিন্তু শিশুদুটি সেই খাবারও ছোঁয়নি। বিপদে পড়েছিলেন জমিদার সহ গ্রামবাসীরা। না খেয়ে ক্রমশই দূর্বল হয়ে পড়ছিল শিশুদুটি।
কয়েকদিন পর শিশুদুটির চোখে পড়েছিল
জমিদারের বাগানে থাকা শিমগাছটি। ছুটে গিয়ে গাছ থেকে শিম ছিঁড়ে তারা গোগ্রাসে গোটা
গোটা শিম খেতে শুরু করেছিল। উদ্ধারকারী মহিলা শিশুদুটিকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন কীভাবে
শিমের বীজ খুলে খেতে হয়। এরপর বেশ কিছুদিন ধরে শিশুদুটি কেবল শিমের বীজই খেয়েছিল।
কিন্তু ছোট ছেলেটি দিন দিন রোগা আর অসুস্থ হয়ে যেতে শুরু করেছিল। তার মনমরা ভাব
কিছুতেই কাটছিল না। কিছুদিনের মধ্যেই দিদির কোলে মাথা রেখে মারা গিয়েছিল ভাইটি।
ভাই মারা যাবার পরে বোনটি যেনো দিশেহারা
পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলো। ওই মহিলা ছাড়া অন্য কেউ কাছে গেলেই হাতের কাছে পাওয়া
যেকোন কিছু ছুড়ে মারতো। মহিলাটিও নিজের সংসার ভুলে মেয়েটির মাথার কাছে সারাদিন বসে
থাকতেন। মহিলার অক্লান্ত পরিশ্রম ও ভালোবাসায় মেয়ে শিশুটি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে
ওঠে। পরবর্তীতে সে শিম ছাড়া অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার খাওয়াও শুরু করে। কিন্তু
আশ্চর্য ব্যপার হলো একসময় তার গায়ের সেই সবুজ রঙ মিলিয়ে যায়। গায়ের চামড়া আর দশটা
ইয়োরোপিয়দের মতোই ফ্যাকাশে বাদামী হয়ে যায়।
ইতোমধ্যে সে কিছুটা বড় হলে এলাকার ডিউকের
ইচ্ছাতে মেয়েটি ইংরেজি শিখতে শুরু করে। মেয়েটি ইংরেজি শিখে মনে ভাব বোঝাতে সক্ষম
হবার পর এক অদ্ভুত তথ্য জানা যায়। তারা দুই ভাইবোন নাকি এসেছে কোন এক কুয়াশাচ্ছন্ন
এলাকা থেকে, যেখানে সবাই সবুজ রঙ এর মানুষ। তারা দুই ভাইবোন তাদের হারিয়ে যাওয়া
গরু খুজতে গিয়ে পাহারের গুহায় ঢুকে হারিয়ে যায়। দীর্ঘ কয়েকমাস পর তারা কৃষকদের
গলার স্বর পেয়ে গুহার অন্যপ্রান্ত দিয়ে বেরিয়ে এখানে চলে আসে।

