সত্যিই কি শাহরুখ খানের সাথে আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়ার বন্ধুত্ব আছে? Shahrukh Khan x Underworld

Author
0

 


ইন্ডিয়ার সবচেয়ে বড় মাফিয়া আবু সালেম একবার শাহরুখ খানকে কল দিয়ে বলেন- “আমার মা আর বউ তোর ভয়ংকর ফ্যান। নিজের ঘরে দুইজন ফ্যান না থাকলে তোরে হয়ত অনেক আগেই আমি কিছু করে ফেলতাম। তোরে যতবার টিভিতে দেখায়, আমার মা ততবার বলে- এই ছেলের বাপ মা না থাকতে পারে, তবে ওর উপরে আল্লাহর রহমত আছে। ওর চেহারা দেখলেই মনে হয়, ওর উপরে আল্লাহর রহমত আছে”।

কিন্তু কেনো একজন মাফিয়া এত বড় একজন সুপারস্টারকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিবেন? তাহলে কি শাহরুখের সাথে মাফিয়াদের কোনো শত্রুতা ছিলো? না এটা কোনো সিনেমার কাহিনী না। একদম বাস্তব কাহিনী। পুরো ভিডিওটি দেখলে আপনি অনেক কিছুই জানতে পারবেন আপনার পছন্দের সুপারস্টার সম্পর্কে, যা আপনার কাছে এতদিন অজানা ছিলো।


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



নব্বইয়ের সময়ে বেশিরভাগ সিনেমায় টাকা ঢালতেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডনেরা। উদ্দেশ্য একেবারেই সিম্পল- নিজেদের কালো টাকা সাদা করা। যদিও এটা ছিলো একটা, ওপেন সিক্রেট ছিল। ইন্ডাস্ট্রির বেশিরভাগ মানুষ এই ব্যাপারটা জানতেন। আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনদের ‘কাছের মানুষ’ বলে খ্যাত নির্দিষ্ট কিছু প্রডিউসারদের সিনেমায় কাজ করার জন্য আর্টিস্টদের ওপর প্রেসার ক্রিয়েট করা হতো। আর এটা ছিলো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। অনিচ্ছা স্বত্বেও অভিনেতা অভিনেত্রীদের সেসব কাজ করা লাগতো। কারণ ঐ একটাই; “জানের মায়া, বড় মায়া”। শাহরুখ খান তখন কেবলই উঠতি স্টার। মানে নাম ডাক কামানো শুরু হয়েছে। মাফিয়াদের থাবাটা ততদিনেও শাহরুখের ওপর পরেনি। কিন্তু শিকারীর নজর তো আর শিকার এড়ায় না। ১৯৯৫ সালে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙে’ সিনেমার পরপরই শাহরুখ সর্বসাকুল্যে জনপ্রিয় হয়ে যায়। আর হয়তো এটাই ছিলো একটা অশুভ লক্ষণ।



১৯৯৭ সালের জানুয়ারি মাস। পরিচালক ও প্রোডিউসার ‘মহেশ ভাটের কাছে একটা ফোন কল আসে। ফোনের অপর প্রান্তে ছিলেন সিনিয়র পুলিশ অফিসার ‘রাকেশ মারিয়া’। মহেশ ভাট আর শাহরুখ তখন একসাথে ‘চাহাত’ আর ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমার কাজ করছিলেন। রাকেশ মারিয়া ফোন করেই বলেন- “আবু সালিমের নেক্সট টার্গেট হচ্ছে আপনার সুপারস্টার, যার সাথে আপনি এই মুহুর্তে কাজ করছেন। তাকে খুবই সাবধানে থাকতে বলেন, এই মুহুর্তে তার বাড়ির বাইরে যাওয়াই রিস্কি। আর সম্ভব হলে এখন শাহরুখকে নিয়ে কোন ধরনের আউটডোর শুটিং করবেন না”। মহেশ ভাট সাথে সাথেই শাহরুখকে ফোন করে সবকিছু জানিয়ে দেন। ভয় পেয়ে শাহরুখ সাথে সাথেই রাকেশ মারিয়ার সাথে দেখা করেন। শাহরুখ কখনো ধারণাই করতে পারেন নাই যে তিনি মাফিয়াদের নজরে পড়বেন। রাকেশ মারিয়া শাহরুখকে বলে- “সুপারস্টার হয়েছেন, এখন আপনি খুবই পরিচিত মুখ। এতো পপুলারিটির সাইড ইফেক্টস এখন নিতেই হবে। টেনশন নেবেন না, আপনার সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের হাতে”। এরপর স্পেশাল অপারেশনস স্কোয়াড থেকে সবসময় সাথে থাকার জন্য একজন বডিগার্ড নিয়োগ দেয়া হয় শাহরুখের জন্য, যার নাম ছিল “মোহান ভিসে”। এরপর থেকে শাহরুখের জীবনযাত্রায় অন্য রকমের পরিবর্তন চলে আসলো। শুটিঙে যাওয়া থেকে শুরু করে যেকোনো জায়গায় যাওয়ার জন্য সবসময় বডি গার্ড আর সতর্কতা নিয়ে চলতে হতো। যেন একটা দমবন্ধকর পরিস্থিতি!



তবে এতদিন যা চলছিল, তা ছিল গিটারের টুং টাং। আসল গান তখনও শুরু হয় নি। এতদিন শাহরুখ জানতেন যে তিনি আন্ডারওয়ার্ল্ডের নজরে আছেন, তবে তখনও পর্যন্ত কোন ফোন কল আসেনি তার কাছে। একদিন গানটা বেজেই উঠলো। খান্ডালা থেকে ‘দিল তো পাগাল হ্যায়’ সিনেমার শুটিং করে একদিন শাহরুখ খান ফিরছিলেন। তখনই তার ফোন বেজে উঠলো। ফোনের অপর প্রান্তে ছিলেন কুখ্যাত ডন আবু সালেম। শাহরুখ কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আবু সালেম বলে ওঠে, “ফোন দিলে ফোন ধরিস না ক্যান রে?” সেই সাথে খাঁটি হিন্দি ভাষায় কিছু গালিগালাজ। আসলে আবু সালেমের রাগের কারণ শাহরুখের ফোন না ধরা নিয়ে নয়, বরং তার রাগের কারণ ছিল; একজন ‘মুসলমান’ প্রোডিউসার যে কিনা আবু সালেমের খুব ‘কাছের মানুষ’ ছিলেন- তার সিনেমা শাহরুখ খান সাইন করেনি। আবু সালেম তখন বলে, “নিজে এত বড় স্টার হইছিস, নিজের কমিউনিটির প্রতি তোর কোন দায়িত্ব নাই? নিজের ধর্মের লোকদের ভুলে গেছিস স্টার হয়ে? এখন যশ চোপড়া আর মহেশ ভাট তোর জন্য সবকিছু? আমার কাছের লোক বাদ দিলাম, একজন মুসলমান এক্টর হয়ে তোর তো দায়িত্ব আরেকজন মুসলমান প্রোডিউসারের সাথে কাজ করা”। শাহরুখ খুব ঠান্ডা স্বরে উত্তর দিলো, “আপনি ভুল করছেন মিস্টার আবু সালিম। আমি ধর্ম দেখে কাজ করিনা, আমি গল্প দেখে আর যাদের সাথে কাজ করে আনন্দ পাই- তাদের সাথেই কাজ করি। আর এরপরেও যদি মুসলমান প্রোডিউসার বা ডিরেক্টরের কথাই বলেন, আপনি সম্ভবত ভুলে যাচ্ছেন- আমি আব্বাস মাস্তানের সাথে কাজ করেছি। আজিজ মির্জার সাথে কাজ করেছি, মনসুর খানের সাথে কাজ করছি। এই মুহুর্তে যে ‘ডুপ্লিকেটের শুটিং করছি, সেটার পরিচালক মহেশ ভাটের মা কিন্তু একজন মুসলিম। এবার কী বলবেন, বলেন?” আবু সালেম একদম চুপ হয়ে গেলেন। কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন, “তোর কথা ঠিক আছে, এরপরেও খেয়াল রাখিস নিজের কমিউনিটির লোকের প্রতি। আর হ্যাঁ, আমি এবারের মত তোরে ছেড়ে দিলাম। তোর আর জানের ভয় নাই, অন্তত আমার কাছ থেকে না। আর ২৪ ঘন্টা যে বডিগার্ড তোর সাথে আঠার মত লেগে থাকে, সেটারে সরায় রাখ। সেটার আর কোন দরকার নাই”



অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, আবু সালেম এরপর থেকে প্রায়ই শাহরুখকে কল করতেন। কোন বিশেষ কারণে না, জাস্ট এমনেই “হাই হ্যালো”। “শুটিং কেমন হল?” “নাস্তা কি খাইসিস আজকে?” “অমুক নায়িকার সাথে তোরে খুব মানায়!” “এত রাত পর্যন্ত শুটিং করলে ঘুমাস কতক্ষণ?” ফোন করে এই টাইপ প্রশ্নই ছিল আবু সালেমের। শাহরুখও খুব ঠান্ডা মাথায় কথা বলতো। প্রতিবার আবু সালেমের সাথে কথা বলার পর তিনি নিজেই নিজেকে জিজ্ঞাসা করতেন- “সব ঠিকঠাক আন্সার দিয়েছি তো? এমন কিছু বলিনি তো যাতে রেগে গিয়ে সে আমাকে বা আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলবে?”

আবু সালেম কিন্তু শাহরুখের ওপর ২৪ ঘন্টাই নজরদারি করতো। শাহরুখ কোথায় যাচ্ছে? কি করছে? কোন শ্যুটিং স্পটে যাচ্ছে? কার সাথে কাজ করছে? শ্যুটিং বিরতিতে কফি খাচ্ছে নাকি জুস খাচ্ছে? সব। এটা শাহরুখ নিজেও বুঝতে পেরেছিলো। কিন্তু এতকিছুর পরেও শাহরুখকে ক্যামেরার সামনে বা পর্দায় দেখে বোঝার কোন উপায় ছিলো না যে তিনি কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন! শুধু আবু সালেম না, অন্য আরো গ্যাংস্টারদের কল আসতো শাহরুখের কাছে। আর প্রতিবারই শাহরুখ ঠান্ডা মাথায় প্রতিটা কল ডিল করতেন। একবার এক ছোটখাটো গ্যাংস্টার শাহরুখকে কল দিয়ে বললেন- “আমার জীবনের উপর একটা সিনেমা বানাব, আমি কীভাবে সাধারণ একটা ছেলে থেকে আজকের গ্যাংস্টার হলাম! আর এই সিনেমার লিডরোল করবি তুই”। শাহরুখ খানও বিনয়ের সাথে তাকে বললেন- “যে কষ্ট আপনি এই জীবনে করেছেন, যে ইমোশনাল গ্রাফ আপনার ক্যারেক্টরের হবে, সেটা পর্দায় ফুটিয়ে তোলার মত যোগ্য অভিনেতা আমি নই! আর আমার মনে হয় না এই ইন্ডাস্ট্রিতে তেমন কেউ আছে!” এইসব নানান যন্ত্রণা তাকে সহ্য করতে হয়েছিল প্রায় চার বছরের মত। পরবর্তীতে অবশ্য আপনাআপনিই এই সমস্যা চলে যায়। ঐ যে কারণটা তো শুরুতেই বললাম। যাই হোক, এতো কিছু পার করেই তিনি সুপারস্টার। তিনি ‘এসআরকে’। তিনিই আমাদের শাহরুখ খান।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!