১৯৮৪ সালে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’র মাধ্যমে যে’কজন নতুন মুখ আমরা বাংলা সিনেমায় পেয়েছিলাম তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন, সৈয়দ মোহাম্মদ আসলাম তালুকদার ওরফে ‘মান্না’। যিনি পরবর্তীতে শীর্ষ তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন। তবে আপনি কি জানেন, যে সিনেমার মাধ্যমে মান্না সকলের কাছে এক জনপ্রিয় নায়ক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন, সেই সিনেমাটাই সেসময় ফ্লপ হবার সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু কি এমন হয়েছিলো পরে?
১৯৮৪ সাল থেকেই মান্নার অভিনয় জীবন শুরু। তবে প্রথম অবস্থায় তিনি কাজ করেছিলেন সাইড নায়ক হিসেবে। ১৯৯১ সালে মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‘কাশেম মালার প্রেম’ সিনেমার মধ্য দিয়ে তিনি মেইন নায়ক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
অনেকেই বলে থাকেন, নায়ক মান্নার ক্যারিয়ারে ‘কাশেম মালার প্রেম’ সিনেমাটিই ছিল তার টার্নিং পয়েন্ট। হ্যাঁ ‘কাশেম মালার প্রেম’ সিনেমাটি সেই সময় সুপারহিট ব্যবসা করার ফলে নায়ক হিসেবে মান্না প্রথম স্বীকৃতি পায় ঠিক আছে। তবে পর্দায় কিন্তু তার অভিনয় দক্ষতা প্রকাশ পায় আরও এক বছর পর। কাজী হায়াতের পরিচালনায় ‘দাঙ্গা’ সিনেমা দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে মান্নার পায়ের তলার মাটি শক্ত হয়। দাঙ্গা’র মাধ্যমেই মান্না সেসময়কার প্রযোজক, পরিচালক, দর্শকসহ সকলের দৃষ্টি কাড়েন।
তবে মজার ব্যাপার হলো, ‘দাঙ্গা’ সিনেমা নিয়ে আছে আরেক চমৎকার ঘটনা।
‘দাঙ্গা’ সিনেমাটি রিলিজ হবার পর প্রথম সপ্তাহে সিনেমা হল মালিকদের বেশ হতাশ করে।
এই বিষয়ে মান্না নিজেই জানিয়েছিলেন যে, তিনি বন্ধুদের সাথে নিয়ে সিলেটের একটা সিনেমা হলে গিয়েছিলেন ‘দাঙ্গা’ সিনেমাটি দেখার জন্য। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি লক্ষ্য করে হলের ভিতরে মাত্র শ’খানেক দর্শক রয়েছে। মান্না বেশ অবাক হয়েছিলো। কারণ সেসময়ে ‘দাঙ্গা’ ছিলো একটা মৌলিক সিনেমা। এই সিনেমা নিয়ে পরিচালক, প্রযোজক, নায়ক সকলেরই একটা আশা ছিলো। কিন্তু হলের ভিতর দর্শকদের এমন হাল দেখে নায়ক নিজেই যেন নিরাশ হলেন।
ক্যারিয়ারে প্রথমবার নায়ক হিসেবে অভিনীত সিনেমা ‘দাঙ্গা’ যেন মান্নার ক্যারিয়ারের
সুপারফ্লপ সিনেমা হতে যাচ্ছিলো।
এতো ভালো অভিনয় করেও সিনেমা ফ্লপ! এটা তো মানা যায় না।
প্রথম সপ্তাহের হল রিপোর্ট দেখে মান্না নিজেই পরিচালক কাজী হায়াতের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইলেন। কারণ তার অভিনীত সিনেমাটি ফ্লপ হতে যাচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এ ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে দ্বিতীয় সপ্তাহেই সারাদেশের হলগুলোতে ‘দাঙ্গা’ দেখার জন্য দর্শকদের মাঝে রীতিমতো মারামারি লেগে গেলো। সুপারফ্লপ হতে গিয়ে সুপারহিট হয়ে গেল ‘দাঙ্গা’, যা রীতিমতো এক অলৌকিক ঘটনা বলা যায়।
আসলে সেই সময় এমন কোনো সিনেমা ছিল না যে, প্রথম সপ্তাহে ফ্লপ হয়ে পরবর্তীতে সুপারহিট হয়েছে। যা একমাত্র ‘দাঙ্গা’র বেলায় ঘটেছে। ‘দাঙ্গা’ যে শুধু ব্যবসায়িক সফলতাই কামিয়েছে, তা কিন্তু না। সমালোচকদের মন জয় করে অর্জন করেছিলো একাধিক জাতীয় পুরস্কার। দেশের বাহিরে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ একাধিক পুরস্কার অর্জন করেছিল সেই ‘দাঙ্গা’।
সেসময়ে ‘দাঙ্গা’ যদি সফল না হতো, তাহলে মান্নার ক্যারিয়ারে পরবর্তীতে ত্রাস, লুটতরাজ, তেজী, ধর ও আম্মাজানের মতো বক্স অফিস কাঁপানো সিনেমাগুলো হতো না। হয়তো মান্নাও নতুন প্রজন্মের দর্শকদের কাছে এতো জনপ্রিয়তা পেতেন না।