বলিউড সিনেমা “হাউসফুল” যারা দেখেছেন তারা ‘পাপা জাগ যায়েগা’ গানটা নিশ্চয়ই শুনেছেন। গানের দৃশ্যে দেখা যায় নায়িকাদের বাবা ঘুমের মধ্যে হাঁটছে। মুভিতে বিষয়টা বেশ হাস্যকরই লাগছিলো। তবে আপনি কি জানেন, বাস্তবেও অনেকেরই ঘুমের মধ্যে হাঁটার অভ্যাস আছে! আর সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো, পৃথিবীতে প্রায় ১৫ শতাংশ শিশুই রাতে ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করে! অনেকেই মনে করে এটা কোনো খারাপ কিছুর ইঙ্গিত, কেউ কেউ ভাবে অতিপ্রাকৃত কোনো ঘটনা।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
সাধারণত একে “স্লিপ ওয়াকিং” বলা হয়। এটা একধরনের স্লিপিং ডিজঅর্ডার। গবেষণায় দেখা গেছে, তিন থেকে সাত বছরের শিশুরাই এতে আক্রান্ত হয় বেশি।
আমাদের ঘুমের প্রধান দুটি ধাপ রয়েছে। ‘র্যাপিড আই মুভমেন্ট র্যাম’ এবং ‘নন র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা নন র্যাম’। ঘুমের প্রথমে আসে ‘নন র্যাম’ ঘুম। এটা ৪টি পর্যায়ে বিভক্ত। দ্বিতীয় পর্যায়ে আসে ‘র্যাম’ ঘুম, যার দুটি উপ-পর্যায় রয়েছে। ‘র্যাম’ ঘুমে চোখের পেশীর সংকোচন বাড়ে, এসময় চোখ নাড়াচাড়া করতে থাকে। ‘নন র্যাম’ ঘুমে চোখের পেশীর নাড়াচাড়া কমে আসে। মানুষ স্বপ্ন দেখে ‘র্যাম’ ঘুমের সময়। যখন দেখবেন কারো ঘুমের মাঝে তার চোখ নড়ছে, চোখের পাতা কাঁপছে বুঝে নেবেন সে স্বপ্ন দেখছে ওই সময়ে। স্লিপ ওয়াকিং ঘটে ঘুমের ‘নন র্যাম পর্যায়ের ৩য় ও ৪র্থ ধাপে। যারা স্লিপ ওয়াকিং করে থাকেন তারা আর সকলের মতোই ঘুমোতে যায় বিছানায়, ঘুমিয়েও পড়ে। কয়েক ঘন্টার মাঝেই শুরু হয় আসল খেলা!! তারা কথা বলা শুরু করেন আপন মনে, হয়তো কাঁদেন বা চিৎকার করেন, উঠে পড়েন ঘুম থেকে। চোখ খুলে তাকান, কিন্তু চেহারা থাকে ভাবলেশহীন, অভিব্যক্তিহীন। কারণ তারা তো আসলে জেগে নেই, চোখ খুলেছেন ঠিকই কিন্তু তার মস্তিস্ক রয়ে গেছে ঘুমের রাজ্যে। তিনি কি করছে, কি বলছে, কোথায় যাচ্ছে এসব কিছু ঘটছে তার নিজের অজান্তেই। হয়তো ঘরের ভিতর হাঁটছে সে, দরজা খুলে যাইরে চলে যাচ্ছে, যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পড়ছে নিজের অগোচরে, কাপড় পরছে বা খুলছে, প্রাত্যহিক অন্যান্য কাজ ও করছে; সবই সেই ‘নন র্যাম’ ঘুমের মাঝেই। এ সময় তার ঘুম ভাঙানো কঠিন। আর জেগে ওঠার পর এ বিষয়ে তার কোনো স্মৃতিই অবশিষ্ট থাকে না। এটাই হলো ‘স্লিপিং ডিসর্ডার’। কিন্তু কেন হয় এ সমস্যা? সঠিক উত্তর পাওয়া মুশকিল। তবে ঘুমের সমস্যা, স্লিপ এপনিয়া বা ঘুমের মধ্যে শ্বাস আটকে আসা, খিঁচুনি রোগ, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বা জ্বরের ঘোরে এমন হতে পারে। কারও কারও পরিবারে এ সমস্যা থাকে। কখনো কখনো বড়দেরও এই সমস্যা হতে পারে, তার বেশির ভাগই অ্যালকোহল, নেশাদ্রব্য বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য হয়। স্লিপ ওয়াকিং তেমন গুরুতর কোনো সমস্যা নয় বলেই বিজ্ঞানীদের ধারণা, এমনিতেই এ সমস্যা সেরে যায়। তবে কখনো ঘুমের ঘোরে দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। সে জন্য যেসব বাচ্চা ঘুমের মধ্যে হাঁটে, তাদের ঘরে ধারালো বস্তু না রাখা, বাথরুম বা সিঁড়ির দরজা খোলা না রাখা, জানালা বন্ধ রাখা উচিত। পারলে তার ঘরের দরজা লক করে রাখা উচিত, যাতে সে বেরিয়ে গিয়ে হোঁচট বা আঘাত না পায়। এ পরিস্থিতিতে এদের ধীরে মোলায়েম ভাবে জাগিয়ে দেওয়াই ভালো। বাচ্চাদের বাবা মায়েরা একটা ডাইরি করতে পারেন, প্রতিদিন বাচ্চা কখন ঘুমোতে যাচ্ছে এবং কখন তার সমস্যার শুরু হচ্ছে সেটা নোট করুন। কিছু দিন গেলে দেখা যাবে একটা প্যাটার্ন মানছে আপনার বাচ্চা। সেই প্যাটার্ন অনুযায়ী স্লিপ ওয়াকিং শুরু হওয়ার ১০-১৫ মিনিট আগে তাকে উঠিয়ে দিন, ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিন। ৫ মিনিট জাগিয়ে রেখে আবার ঘুম পড়িয়ে দিন। এভাবে অভ্যাস পরিবর্তনের ফলে কাজ হতে পারে।
ভালো ঘুম এবং ঘুমের নিয়ম মেনে চললে এই সমস্যা দূর হয় যায়। সুতরাং এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।