বলিউড, বিশ্বের
খ্যাতনামা সকল মুভি ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে অন্যতম। এই ইন্ডাস্ট্রি সিনেমা জগতে উপহার
দিয়েছে অগণিত কিংবদন্তি অভিনেতা, অজস্র মাস্টারপিস
সিনেমা। পুরনো আমলের দিলীপ কুমার, রাজেশ খান্না থেকে শুরু
করে বর্তমানের শাহরুখ খান, অমিতাভ বচ্চন, ইরফান খানরা একেকজন বিশ্বনন্দিত অভিনেতা। তবে এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসার
পেছনে সবার গল্পই ভিন্ন। এদের মধ্যে কেউ কেউ শুরুতেই বড় পর্দায় আসতে পারেনি,
শুরুটা করতে হয়েছে ভারতীয় টেলিভিশন সিরিয়ালের মাধ্যমে।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
শাহরুখ খান
শাহরুখ খানকে বলা চলে
পুরাদস্তুর ‘সেলফ মেড স্টার’। বলিউড চেনেন, কিন্তু শাহরুখকে চেনেন না এমন
মানুষ পৃথিবীতে পাওয়া দুষ্কর। হাতে অল্প কিছু টাকা, অদম্য
জেদ, আকাশ ছোঁয়ার প্রেরণা আর বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে মায়া
নগরী মুম্বাইয়ে পা রেখেছিলেন দিল্লির এই ছিপছিপে গড়নের যুবক। হার না মানা অসম
সাহসী এই যোদ্ধার অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল আশির দশকের শেষ দিকে, ফৌজি নামে এক টিভি সিরিয়ালের মাধ্যমে। ১৯৮৮ সালে দূরদর্শনে চ্যানেলে
প্রচারিত হতো এই ধারাবাহিক। সেনাবাহিনীর ক্যাডেট অভিমন্যু রায়ের ভূমিকায় অভিনয়
করে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি। শাহরুখের ‘আই সে চ্যাম্প’ ডায়লগ ছিল তখন
মানুষের মুখে মুখে। এরপর ‘দিল দরিয়া’ নামে এক ধারাবাহিকেও কাজ করেছিলেন বলিউড
বাদশাহ।
ছোট পর্দায় কিং খানের
যাত্রায় আরও একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হলো সার্কাস (১৯৮৯)। শেখারন রায়ের চরিত্রে
অভিনয়ের ফলে চারদিক থেকে এই শো তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল শাহরুখকে। ওই
ধারাবাহিকেই ভিকি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকর। পরবর্তীতে
আশুতোষ-শাহরুখ জুটিকে একসাথে দেখা যায় বলিউডের কাল্ট ক্লাসিক ‘স্বদেশ’ (২০০৪)
সিনেমায়।
ইরফান খান
দর্শক নিরিখে ইরফান খান
তার দুর্দান্ত অভিনয় যোগ্যতা দিয়ে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা একাধারে সকলের মন জয় করে
নিয়েছিলেন। অনেকে বলে থাকেন, তিনি নাকি শুধুমাত্র চোখ দিয়েও অভিনয়
করতে জানেন। শাহরুখের মতোই কোনোরকম বলিউডি ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়াই নিজের জাত
চিনিয়েছেন ইরফান। ইরফান কত উঁচু মাপের অভিনেতা তা সকলেরই জানা। তবে অনেকেরই হয়তো
অজানা, তিনি অভিনয় জগতে পদার্পণ করেছিলেন ‘ভারত এক খোঁজ’
নামক টিভি সিরিয়ালের মাধ্যমে। নব্বইয়ের দশকে জি টিভিতে ‘বানেগি আপনি বাত’ নামে এক
টিভি ধারাবাহিক সম্প্রচার করা হতো। ওখানে মধ্যবয়স্ক এক পিতার চরিত্রে দেখা যায়
ইরফানকে। সকলে তার প্রাঞ্জল অভিনয়ে যারপরনাই মুগ্ধ হয়েছিল।
‘শ্রীকান্ত’ সিরিয়ালে
তিনি এক নেতিবাচক ভূমিকায় অভিনয় করে সাড়া ফেলেছিলেন। এরপর জয় হনুমান সিরিয়ালে
মহর্ষি বাল্মিকীর চরিত্রে, চাণক্য সিরিয়ালে সেনাপতি ভদ্রশীলের
চরিত্রে তিনি শুধু মুগ্ধতাই ছড়িয়ে গেছেন। তবে তিনি আসল দাও মেরেছিলেন চন্দ্রকণ্ঠ
সিরিয়ালের মাধ্যমে। বদ্রীনাথ ও সোমনাথ নামে দ্বৈত ভূমিকায় তিনি অভিনয় করেছিলেন
এতে। এই সিরিয়ালই বলিউডে পা রাখতে তার জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল। এরপরে তো
বলিউডের পাশাপাশি হলিউডের নিজের জাত চিনিয়ে গিয়েছেন প্রয়াত এই অভিনেতা।
সুশান্ত সিং রাজপুত
খুব কম সময়ে সকলের মনে
জায়গা করে নেওয়া এক অভিনেতা হলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। তাকে দেওয়া প্রত্যেকটা
চরিত্রের সাথেই তিনি সুবিচার করেছেন। উদাহরণ হিসেবে মহেন্দ্র সিং ধোনীর
বায়োগ্রাফিক্যাল সিনেমা অথবা ডেব্যু সিনেমা কাই পো চে-র কথাই টানা যায়। অভিনয় জগতে
না আসলে তিনি হয়তো ভারতের দেশবরেণ্য বিজ্ঞানী অথবা প্রকৌশলী হতে পারতেন। প্রয়াত
সুশান্ত সিং রাজপুত ছিলেন ভারতে জাতীয় পর্যায়ে ফিজিক্স অলিম্পিয়াড চ্যাম্পিয়ন।
ভারতের অন্যতম সেরা প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষা ‘অল ইন্ডিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং
এন্ট্রেন্স এক্সামিনেশন’-এ তিনি সপ্তম স্থান অধিকার করেছিলেন। তবে প্রকৌশলী
হবার বদলে তিনি অভিনয় জগতকে বেছে নিয়েছিলেন।
সুশান্ত অবশ্য সিনেমায়
আসার আগে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন টিভি সিরিয়ালের বদৌলতে। এর মধ্যে সুপারহিট পবিত্র
রিশতা সিরিয়ালের কথা না বললেই নয়। সবাই তার মেধা সম্পর্কে ধারণা পায় তখনই। ওই সময়
ভারতের ঘরে ঘরে এক পরিচিত মুখ ছিল সুশান্ত।
এই শোতে তার বিপরীতে
ছিলেন অভিনেত্রী অঙ্কিতা লোখান্ডে। বাস্তবে তারা বহু বছর প্রেমও করেছেন। স্টার
প্লাসের ‘কিস দেশ ম্যায় হেয় মেরা দিল’ (২০০৮) ধারাবাহিকের মাধ্যমে ছোট পর্দায়
অভিষেক ঘটে তার। এরপর তাকে দেখা যায় কয়েকটি রিয়েলিটি শো-তে। একসময় বলিউড থেকে ডাক
আসতে থাকে তার। খুবই অল্প সময়ের মাঝে ‘কাই পো চে’, ‘এমএস ধোনি- দ্য আনটোল্ড
স্টোরি’, ‘ছিছোরে’, ‘পিকে’ সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকের
মনে স্থান পাকাপোক্ত করে নেন তিনি।
আয়ুষ্মান খুরানা
বলিউডে ফ্রেশ কন্টেন্ট
নির্মাণে আয়ুষ্মান খুরানার প্রতি দর্শকদের ভরসা ও ভালোবাসাটা একটু অন্য ধাঁচের।
নিত্যদিনের ছাঁপোষা চাকরিজীবী থেকে কঠিন মুখের পোড়খাওয়া পুলিশ- সবকিছুতেই তিনি
প্রাঞ্জল ও সাবলীল, যেন ভারতের একজন আম-আদমি।
বলিউডে ‘দাম লাগা কে হাইশা’, ‘বারেলী
কি বারফি’, ‘ড্রিম গার্ল’, ‘বাধাই
হো’, ‘আন্ধাধুন’, ‘আর্টিকেল
১৫’সহ একের পর এক সফল ও হিট ফিল্ম উপহার দিয়ে দর্শক, প্রযোজক,
ও সমালোচকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন তিনি। বলিপাড়ায় আসার আগে ২০০৪
সালে ‘এমটিভি রোডিজ’ রিয়ালিটি শোতে দেখা গেছে তাকে। কাজ করেছিলেন ‘কেয়ামত’ এবং ‘এক
থি রাজকুমারী’-এর মতো সিরিয়ালেও।
পঙ্কজ ত্রিপাঠি
অভিনেতা হিসেবে পঙ্কজ
ত্রিপাঠির প্রাঞ্জল অভিনয় দক্ষতা নিয়ে যতই প্রশংসা করা হবে, তা
ততই কম হয়ে যাবে। গ্যাংস অফ ওয়াসিপুরের সুলতান থেকে মির্জাপুরের কালিন ভাইয়া,
সবই জায়গাতেই তিনি দুর্দান্ত। তবে ক্যারিয়ারের শুরুতে অনেক সংগ্রাম
করতে হয়েছে তাকে। ‘পাউডার’ টিভি সিরিয়ালে সকলের সামনে নিজেকে মেলে ধরেন পঙ্কজ। এতে
তিনি ড্রাগ লর্ড নাভিদ আনসারির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এরপর ‘পবিত্র রিশতা’,
‘সারোজিনী’, ‘গুলাল’- এও তাকে দেখা যায়।
অনুরাগ কেশ্যাপের গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর দিয়ে বলিউডে নিজের স্থান পাকা করে নেন পঙ্কজ।
এছাড়াও বিদ্যা বালান,
রোনিত রায়, ম্রুনাল ঠাকুর, ইয়ামি গৌতমসহ আরো অনেকেরই অভিনয় জীবনের শুরু হয়েছে
সিরিয়ালের হাত ধরে।