আত্মহত্যা? নাকি হত্যাকান্ড? সালমান শাহ মৃত্যু রহস্য- যা আজো জানা গেল না | Salman Shah

Author
0


১৯৯৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর দিনটি ছিল শুক্রবার। সেদিন সকাল সাতটায় বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ছেলে শাহরিয়ার চৌধুরী ইমনের সঙ্গে দেখা করতে ইস্কাটনের বাসায় যান। কিন্তু ছেলের দেখা না পেয়ে তিনি ফিরে আসেন। এই শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন ঢাকার তৎকালীন সিনেমা জগতের সুপারস্টার সালমান শাহ। বেলা এগারোটার দিকে একটি ফোন আসে সালমান শাহ'র মা নীলা চৌধুরীর বাসায়। ঐ টেলিফোনে বলা হলো, সালমান শাহকে দেখতে হলে তখনই যেতে হবে। টেলিফোন পেয়ে নীলা চৌধুরী দ্রুত ছেলে সালমান শাহ'র বাসার দিকে রওনা হয়েছিলেন। তবে সালমানের ইস্কাটনের বাসায় গিয়ে ছেলে সালমান শাহকে বিছানার ওপর দেখতে পান নীলা চৌধুরী।


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



"খাটের মধ্যে যেদিকে মাথা দেবার কথা সেদিকে পা। আর যেদিকে পা দেবার কথা সেদিকে মাথা। পাশেই সামিরার (সালমান শাহ'র স্ত্রী) এক আত্মীয়ের একটি পার্লার ছিল। সে পার্লারের কিছু মেয়ে ইমনের হাতে-পায়ে সর্ষের তেল দিচ্ছে। আমি তো ভাবছি ফিট হয়ে গেছে।"

 

"আমি দেখলাম আমার ছেলের হাতে পায়ের নখগুলো নীল। তখন আমি আমার হাজব্যান্ডকে বলেছি, আমার ছেলে তো মরে যাচ্ছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন নীলা চৌধুরী।

ইস্কাটনের বাসা থেকে সালমান শাহকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে বলা হয় সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়কের আকস্মিক মৃত্যুতে স্তম্ভিত হয়ে যায় পুরো দেশ।

 

সে সময় সারা দেশজুড়ে সালমানের অসংখ্য ভক্ত তাঁর মৃত্যু মেনে নিতে না পারায় বেশ কয়েকজন তরুণী আত্মহত্যা করেন বলেও খবর আসে পত্রিকায়। সালমানের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে না পারায় তাঁর ভক্তদের মাঝে তৈরি হয় নানা প্রশ্নের। সালমান শাহের মৃত্যুকে ঘিরে যখন একের পর এক প্রশ্ন উঠতে থাকে, তখন পরিবারের দাবির মুখে দ্বিতীয়বারের মতো ময়না তদন্ত করা হয়। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করা হলে মামলার কাজ সেখানেই থেমে যায়।


২০১৪ সালে পিবিআই পুনরায় এই কেস নিয়ে তদন্ত করে। তবে এবারেও তারা আত্মহত্যার পক্ষেই প্রতিবেদন দেয়। শাবনূরের সঙ্গে সালমান শাহর সম্পর্ক নিয়ে রাঁধুনি মনোয়ার বেগমের সাক্ষ্য নিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়, তিনি নাকি দেখেছেন সালমান শাবনূরকে নিয়ে ঝগড়া করতে করতে ঘরে ঢোকেন এবং ঝগড়া করতে করতেই ঘুমান। মনোয়ারা বলেছেন, সালমান তার স্ত্রী সামিরা ও শাবনূর দুজনকেই ভালোবাসতেন। সালমান নাকি চেয়েছিলেন শাবনূরকে বিয়ে করতে এবং তাদেরকে একসঙ্গে রাখতে। কিন্তু সামিরা সালমানের এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল। সালমান-সামিরা দম্পতির কোনো সন্তান ছিল না।

সালমানের মৃত্যুর আগের দিন রাত সাড়ে ১১টায় তাকে শাবনূর দুবার ফোন করেন এবং সালমান দুবারই বাথরুমে চলে যান এবং চিত্কার করে বলেন, ‘তুমি (শাবনূর) আর কখনই বাসায় টেলিফোন করবে না।’ ১২টার সময় আবার যখন টেলিফোনে কল আসে, তখন শাবনূরের উপহার দেয়া একটি টেবিল ফ্যান ভেঙে ফেলেন। এর পরের ঘটনা নিয়ে সামিরা বলেন, রাত ৩টার দিকে তারা ঘুমিয়ে পড়েন। সকাল ৯টায় তার শ্বশুর তাদের বাসায় আসেন এবং ৫০ হাজার টাকা দেন। এক পর্যায়ে তিনি শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিলেন। পরে দেখেন সালমান শাহ চলে গেছেন এবং যাওয়ার সময় দরজা খুলে তার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন। সামিরার ভাষ্যমতে, এটাই ছিল সালমানের সঙ্গে তার শেষ দেখা। এরপর সবাই মিলে তাদের ড্রেসিং রুমের দরজায় ডাকাডাকি করেন এবং খুলে দেখেন সালমান ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছেন।

 


এদিকে সালমান শাহর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক এবং এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সালমান শাহ যে আত্মহত্যা করেছেন, সে সম্পর্কে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শাবনূর। তিনি এখন অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন। সেখান থেকে জানিয়েছেন, সালমান শাহর আত্মহত্যায় তিনি কোনোভাবেই ভূমিকা রাখেননি, এমনকি তার সঙ্গে তার কোনো প্রেমের সম্পর্কও ছিল না। সালমান শাহর সঙ্গে তার ভাইবোনের সম্পর্ক ছিল। সালমান শাহর পরিবারের পক্ষ থেকে তার মামা আলমগীর কুমকুমও পিবিআইর এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। যুক্তি তুলে ধরে আলমগীর বলেন, ‘এ মামলার যে রাজসাক্ষী রুবি সুলতানা, তিনি সামিরার মামি। তিনি তো বলেছেন, সালমানকে হত্যা করা হয়েছে। তার ছেলেকে দিয়ে সামিরা পুঁটলি সরিয়েছে। ওই পুঁটলিতে কী ছিল? তাকে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো না? তার পর্যন্ত কি পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে পিবিআই? আমরা পুনঃতদন্ত চাইব।’

 

দুই দফা আত্মহত্যার পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন আসলেও কিছু খটকা থেকেই যায় এই কেস নিয়ে। সালমান মারা যাওয়ার আগের রাতে ৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৯৬, মামাকে ফোন করে বলেছিল-মামা এ বউ কে নিয়ে ঘর করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি কালই ও কে ডিভোর্স দিব। সেই কাল আজও আসে নি।

সালমান যে দড়ির সাথে ফাঁস দেয়া ছিল সে দড়ির সাথে ফ্যান এ বাঁধা দড়ির মিল নাই। সালমানের বউ এর সাথে আজিজ মো: ভাই নামক এক পরিচালকের নাকি পরকিয়া ছিল-সালমানের সন্দেহ ছিল। মারা যাওয়ার কয়েক দিন আগেও সে পরিচালকের সাথে সালমানের বউ সামিরাকে ড্যান্স করা নিয়ে হাতাহাতি হয়েছে। সালমানের পাশের ফ্ল্যাটে থাকা বাসিন্দারা সে রাতে ধস্তাধস্তির শব্দ শুনতে পেয়েছিল বলে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিল। সালমানের ড্রেসিং রুম যেখানে সালমানের লাশ পাওয়া গিয়েছিল তার পাশে বড় একটা মই রাখা ছিল। লাশ নামাতে এতো তারাতারি উচু ফ্ল্যটে কিভাবে একটা বড় মই ম্যানেজ করা সম্ভব- সেটাও রহস্যজনক। সালমান যে ব্র‌্যান্ডের সিগারেট খেত, সালমানের মৃত্যুর ঐ রুমে ঐ দিন অন্য ব্র‌্যান্ডের সিগারেট পাওয়া গেছে।

 

কবর থেকে লাশ উঠিয়ে সালমানের যিনি রি-পোষ্টমর্টেম করেছেন। তিনি তার এক দুসম্পরর্কের আত্মীয়ের কাছে বলেছেন-সালমানকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু আমি যদি সে কথা প্রকাশ করতাম, আমার দুইটা মেয়েকে ওরা মেরে ফেলত।

এই ওরা কারাআত্মহত্যা নাকি খুন? দুই দশক পরেও সালমান শাহের মৃত্যু রহস্যই থেকে গেল।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!