কে-পপ ইন্ডাস্ট্রির যেসব লুকানো সত্য জানলে আপনারা চমকে যাবেন || Untold Truth of Korean K Pop Industry

Author
0

 


বর্তমানে মিউজিক দুনিয়ার সবথেকে বড় সুপারস্টার কারা? অভিয়াসলি কে-পপ তারকারা। বিটিএস কিংবা ব্ল্যাকপিঙ্কের হিউজ ফ্যানবেইজ এখন দুনিয়াজুড়ে। গানের পাশাপাশি তাদের লুক, ড্যান্স ও ফ্যাশন সেন্সেরও ভক্ত কে-পপ ফ্যানরা। কিন্তু তাদের এত আভিজাত্য ও গ্ল্যামারের পেছনে রয়েছে কিছু লুকানো সত্য। এই ভিডিওটিতে আমরা কে-পপ ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে প্রচলিত কিছু টক্সিক প্র্যাক্টিস নিয়ে আলোচনা করবো। যার মধ্যে রয়েছে আইডলদের কন্ট্রোল করা থেকে শুরু করে ইন্টেন্সিভ ডায়েট প্ল্যান, কাস্টিং কাউচ, কঠোর ডেটিং রুল ও স্লেইভ কন্ট্রাক্ট।


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন




নাম্বার নাইন – ফোন ব্যবহার করতে না দেওয়া

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এর মতে, বেশ কয়েকজন কে-পপ তারকা জানিয়েছেন ক্যারিয়ারের শুরুতে তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেওয়া হতো না। কোন গানের কম্পিটিশন জিতলেই শুধুমাত্র পার্সোনাল ফোন ইউজ করতে পারতো তারা। ২০১৬ সালে ‘জিফ্রেন্ড’ নামক গার্ল গ্রুপ জানিয়েছে এমনই অবাক করা এক তথ্য। ‘ইমমর্টার সংসঃ সিংগিং দ্য লেজেন্ডস’ নামক কম্পিটিশনে জেতার পরেই নাকি তারা ফোন ইউজ করার পারমিশন পেয়েছিল।


নাম্বার এইট – রেসিজম

এসবিএস পপ এশিয়া একটি রিপোর্ট করেছিল কে-পপ ইন্ডাস্ট্রিতে রেসিজমের ব্যাপারে। সেখানে তারা জানায় ‘মিস এ’ গ্রুপের ফেই একটি ইন্টারভিউতে বলেছিল শুরুর দিকে তার নামে একটি বাজে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি নাকি সপ্তাহে একদিন গোসল করেন! মূলত তিনি চাইনিজ হওয়ায় তাকে দেখতে পারতেন না বাকিরা। এছাড়া আরেক শ্যানন নামক এক গায়িকা জানিয়েছিলেন তাকে নাকি সবাই ফরেইনার বলে খ্যাপাত। এছাড়াও হাফ-ব্ল্যাক তারকাদের অনেকেই জানিয়েছে তাদের নিয়মিত ‘ডার্টি’ বলে অপমান করা হতো।

একবার ‘কেপপ স্টার’ নামক এক রিয়েলিটি শোতে একজন হাফ-ব্ল্যাক গায়িকা টপ ফাইভে পৌছে গিয়েছিল। কিন্তু ভালো করার পরেও দর্শকদের ভোটে তিনি বাদ পড়ে যান। কারণ কোরিয়ানরা তাদের নিজেদের লোক ছাড়া অন্য কাউকে একদমই এক্সেপ্ট করতে পারে না।


নাম্বার সেভেন – ইঞ্জুরি নিয়েও পারফর্ম করা

কে-পপ ইন্ডাস্ট্রির নিয়ম-কানুন এতটাই কড়া যে, ইঞ্জুরিতে পড়লেও পারফর্ম করতে হয় আইডলদের! গার্ল ব্যান্ড ‘স্টেলার’ এর একজন মেম্বার একবার নেক ব্রেস পড়ে স্টেজে উঠেছিল পারফর্ম করতে! যেখানে সেই কন্ডিশনে তার বিছানা থেকেই ওঠার কথা না।

এক্সো ব্যান্ডের একজন মেম্বার একবার অ্যাঙ্কেল ব্রেস পড়ে পারফর্ম করেছিল। এখানেই শেষ নয়, আরো আছে। 'জিফ্রেন্ড' ব্যান্ডের সিনবি একবার স্টেজে শোল্ডার ডিসলোকেট করার পরেও পারফর্ম্যান্স শেষ করেছিল। ইভেন বিটিএস ব্যান্ডের জাংকুকও এর শিকার হয়েছে। স্টেজে একবার হাত কেটে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু তার পারফর্ম্যান্স শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত কোন সাহায্য আসে নি তার কাছে!


নাম্বার সিক্স – এতটা পারফেক্ট ফেইসের পেছনে আসল রহস্য প্লাস্টিক সার্জারি!

সিউলকে বলা হয় প্লাস্টিক সার্জারির রাজধানী! যেখানে প্রটি তিনজন নারীর মধ্যে একজন প্লাস্টিক সার্জারি করান। কে-পপ ইন্ডাস্ট্রির আইডলদের প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে অ্যানিমে ক্যারেক্টারের মতো কিউট বানানো হয়। এই ব্যাপারটা তারা এতটাই গুরুত্বের সাথে দেখে যে, ডিরেক্ট এজেন্সি প্রেসিডেন্টরা এর সাথে ইনভলভ থাকে।

‘সুপার জুনিয়র’ গ্রুপের শিংডন একটি ইন্টারভিউতে জানায়, তাকে নাকি একদিন এজেন্সির প্রেসিডেন্ট বলেছিল তার চোখ দেখতে সুন্দর না এবং তার উচিত চোখে প্লাস্টিক সার্জারি করানো। তিনি শুনেওছিলেন প্রেসিডেন্টের কথা।



নাম্বার ফাইভ – ইন্টেনসিভ ডায়েট

কে-পপ আইডলদের ডায়েট রুটিন দেখলে মাথা ঘুরে যেতে পারে আপনার! তারা ইন্টেনসিভ ডায়েট করতে বাধ্য হয় শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ও আনরিয়েলিস্টিক বিউটি স্ট্যান্ডার্ড ধরে রাখার জন্যে। ৫’২” থেকে ৫’৯” উচ্চতার মেয়ে আইডলদের জন্য ওজন ঠিক করে দেওয়া হয় সর্বোচ্চ ৪৭ কেজি! এমনকি আইইউ ও শিউমিনের মতো বিখ্যাত আইডলরাও এই প্রসেসের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। এক বেলার খাবারে শুধুমাত্র একটি মিষ্টি আলু ও এক কাপ কফি দিয়ে কাটিয়ে দিতেন তারা।

বডি শেমিং-ও কোরিয়ান মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির আরেকটি বাজে চর্চা। মেয়ে আইডলদের পাতলা কোমর এবং ছেলে আইডলদের ক্ষেত্রে শার্প জ লাইন থাকতেই হবে। আর এসব পাওয়ার জন্য সবথেকে সহজ ও শর্টকাট ওয়ে হচ্ছে বর্ডারলাইন আনহেলদি ডায়েট।

নাইন মিউজেস নামক এক গার্ল গ্রুপ ‘পেপার কাপ ডায়েট’ এর জন্য পরিচিতি পেয়েছিল। এই ডায়েট পদ্ধতিতে একটি ছোট পেপার কাপ নেওয়া হয়, প্রতি বেলায় যে কোন ধরনের হেলদি খাবার শুধুমাত্র এক কাপ পরিমাণ খেয়ে কাটিয়ে দিতে হয়। মানে, অত্যাচার কাকে বলে!

এছাড়াও গুগডান ব্যান্ডের কিং-মি না রীতিমত খাবার বন্ধ করে দিয়ে শুধুমাত্র দুই বোতল স্পার্কলিং ওয়াটার খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছিল তার ওজন ৪২ কেজিতে নামার আগ পর্যন্ত। এসব বাজে প্র্যাক্টিসের কারণে ইটিং ডিজঅর্ডার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রবল।


নাম্বার ফোর – কাস্টিং কাউচ

অন্যসব বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির মতো কে-পপ ইন্ডাস্ট্রিতেও কাস্টিং কাউচ আছে। যেহেতু নতুন কারো সাকসেস পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম এবং ম্যানেজম্যান্টের হাতে পাওয়ারও থাকে অনেক বেশি, তাই বেশিরভাগ নতুন মেয়েরাই কাস্টিং কাউচের স্বীকার হয়। ইন্ডাস্ট্রির ভেতরে একে ‘স্পন্সরশীপ’ বা ‘ট্রানজ্যাকশন’ বলে। ২০১০ সালে ‘কোরিয়া জুনগ্যাং ডেইলি’ রিপোর্ট করেছিল, প্রায় ৬০% মেয়ে আইডল পপুলারিটির বিনিময়ে ‘সেক্সুয়ালি পে’ করার অফার পায়। ২০১৫ সালে লস অ্যাঞ্জেলসে ওহ মাই গার্ল ব্যান্ডের ৮ জন আইডল ১৫ ঘণ্টা পুলিশের হাতে আটক ছিল। সাজগোজ ও স্যুটকেসভর্তি আবেদনময়ী জামা-কাপড় দেখে পুলিশ তাদেরকে রীতিমত প্রস্টিটিউট ভেবে ভুল করেছিল।


নাম্বার থ্রি – কঠোর ডেটিং রুলস

কে-পপ এজেন্সি গুলো যে ডেটিং এর বিরুদ্ধে এটা রীতিমত ওপেন সিক্রেট। কিছু কিছু এজেন্সি রীতিমত নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেয় ডেটিং কিংবা কোন রিলেশনশিপের উপরে। কে-পপ আইডল হিউনা ও ইডউন, যারা কিউব এন্টারটেইনমেন্টের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল, তারা একটি জয়েন্ট অ্যালবামের ঘোষণার সময়ে প্রকাশ করে দেয় যে তারা একে অপরকে ভালোবাসে। এরপর কিউব এন্টারটেইনমেন্ট একটি স্টেটমেন্ট দিয়ে তাদেরকে চুক্তি থেকে বাদ দিয়ে দেয়।



নাম্বার টু – স্লেভ কন্ট্রাক্ট

যখন আপনি একটা কন্ট্রাক্টে সাইন করতে যাবেন এবং সেই কন্ট্রাক্টকে মৌখিকভাবে বলা হয় স্লেভ কন্ট্রাক্ট, তাহলে স্বভাবতই আপনাকে আরেকবার ভাবতে হবে। কে-পপ ইন্ডাস্ট্রির সবথেকে বড় সমস্যাগুলোর একটা হচ্ছে, আইডলরা সাধারণত তাদের জীবনটাই উৎসর্গ করে দেয় কন্ট্রাক্টের নামে। পপস্টার প্রিন্স ম্যাকের মতে অনেকসময় কন্ট্রাক্ট পেপারে বলা হয়ে থাকে আগামী ৮-১০ বছরে আপনি এই গ্রুপ ছাড়তে পারবেন না এবং অবশ্যই সেভাবেই লাইফ লিড করতে হবে যেভাবে আপনাকে বলা হবে। এসব কন্ট্রাক্ট অনেকেই জনপ্রিয়তা পাওয়ার লোভে পড়ে সাইন করে ফেলে। কিন্তু ঘরে ঘরে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরেও শুধুমাত্র কন্ট্রাক্টের আওতায় থাকার কারণে সেই জনপ্রিয়তা ঠিকঠাক উপভোগের সুযোগ হয়ে ওঠে না। বয় ব্যান্ড ডং ব্যাং শিন কি ১৩ বছরের একটি লো-পে কন্ট্রাক্টের বিরুদ্ধে কেস জিতেছিল। অথচ তারা সর্বকালের অন্যতম বড় কে-পপ ব্যান্ড। এছাড়া গার্ল ব্যান্ড স্টেলার একটি ইন্টারভিউতে বলেছিল তারা একসময় এতটাই টাকার অভাবে ছিল যে সবাই মিলে ভাগ করে খাবার খেত।



নাম্বার ওয়ান – কে-পপ সুইসাইডস

কে-পপ ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ কিছু সুইসাইড ইনসিডেন্ট আছে। ২০১৯ এ ‘গু হারা’ নামক এক আইডল সুইসাইড করে। কারণ হিসেবে জানা যায় তার এক্স-বয়ফ্রেন্ড গোপনে তোলা সেক্স টেপ দিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করছিল। এর মাসখানেক আগে হারার বন্ধু আরেক সুপারস্টার আইডল সালিও সুইসাইড করেন। যার কারণ ছিল ম্যাসিভ অনলাইন অ্যাবিউজ নিতে না পারা।

এর আগে ২০১৭ সালে ‘শাইনি’ ব্যান্ডের মেইন ফেইস জং হিউন সুইসাইড করেন। যার কারণ ছিল ডিপ্রেশন। তার সুইসাইড নোট থেকে জানা যায়, মিউজিক আইডল হয়ে ইনটেন্স প্রেশার আর সামলাতে পারছিলেন না তিনি।

তো ভিউয়ার্স, বুঝতেই পারছেন বাইরে থেকে কে-পপ ইন্ডাস্ট্রিকে দেখতে যতটা ঝা-চকচকে লাগে না কেন, ভেতরে ততটাই ডার্ক সাইডে ভরা!

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!