ডিভিডি ব্যাবসায়ি থেকে নেটফ্লিক্সের নির্মাতা || Story of Netflix: from DVD rental to streaming

Author
0


মুভি কিংবা সিনেমা দেখার জন্য এখন আর মানুষ টেলিভিশনের সামনে হা করে বসে থাকে না। সিনেমা হলেও কমেছে আনাগোনা। টুক করে পকেট থেকে স্মার্টফোনটা বের করে দেখে ফেলা যায় যেকোনো সিনেমা অথবা গোটা ওয়েব সিরিজ। বিনোদনের মাধ্যম এখন সবার পকেটে পকেটেই ঘুরছে। গত দুই দশকের মধ্যে বিনোদন জগতে আমূল এই পরিবর্তন যে দেখা যাবে, সেটা কেইবা আন্দাজ করেছিলো? আর এই গতিপথ বদলে দেওয়ার সূচনাইবা কারা করেছিল? সেই নামটা অবশ্য সবার জানা।


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



“ওটিটি” যার পুরো অর্থ ‘ওভার দ্যা টপ’। যাকে বলে, তারবিহীন মিডিয়া সার্ভিস। অর্থাৎ কোনো প্রকার ক্যাবল বা সিডি ডিভিডির টানাটানি না শুধুমাত্র ইন্টারনেটের ব্যবহার করেই ডুব দেওয়ায় যাবে বিনোদনের রাজ্যে। পুরো বিষয়টা খুলে বলি।

তখনকার সময়ে থিয়েটার ছাড়া মানুষের সিনেমা দেখার একমাত্র মাধ্যম ছিলো দোকান থেকে ভাড়া করা সিডি ক্যাসেট। “রিড হ্যাস্টিংস” নামের এক ব্যাক্তি তখন পরিকল্পনা করেন ডিভিডি ক্যাসেটের মাধ্যমে সিনেমা বিক্রি করার। ডিভিডির রেজ্যুলুশন সিডির চেয়ে অনেকগুণে ভালো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সে সময়ে ডিভিডি প্লেয়ার কেবলই আমেরিকার বাজারে আসা শুরু করেছে। ১% মানুষের বাসাতেও ডিভিডি প্লেয়ার নেই। জেনেবুঝেই রিড এই ঝুঁকিপূর্ণ উদ্যোগটা হাতে নিলেন।

১৯৯৭ সালে রিড তার বন্ধু ‘মার্ক র‍্যান্ডলফ’কে নিয়ে খুলে ফেললেন একটি ডিভিডি সাপ্লায়ার কোম্পানি, যার নাম “নেটফ্লিক্স”। অবশ্য রিডের এই ভবিষ্যৎ চিন্তার সুফল আসে খুব দ্রুতই। যুক্তরাষ্ট্রে বছর খানেকের মধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে নেটফ্লিক্স। চোখের পলকে কোম্পানিটির আয় দাঁড়ায় ৫ মিলিয়ন ডলারের মতো।



২০০৭ সালে কোম্পানির ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে রিড তার আরেকটি দূরদর্শী প্রকল্পের ঘোষণা দেন। সসময়ে ইউটিউবের জনপ্রিয়তা দেখে তার মাথায় আসে, সিনেমার পরবর্তী মাধ্যম হতে যাচ্ছে ইন্টারনেট। সুতরাং তিনি নেটফ্লিক্সের একটি ‘ভিডিও অন ডিমান্ড’ ওয়েবসাইট খোলার সিদ্ধান্ত নেন। যেখানে গ্রাহকরা চাইলেই তাদের প্রিয় সিনেমা উপভোগ করতে পারবেন। প্রথমদিকে এই ওয়েবসাইট পুরোপুরি ফ্রি ছিল। ভালো মানের তেমন কোনো সিনেমা তাদের সংগ্রহে না থাকলেও, ধীরে ধীরে তাদের ওয়েবসাইটে যোগ হতে থাকে সনি, ডিজনি, প্যারামাউন্ট, এমজিএম, লায়ন্সগেটের মতো বড় বড় কোম্পানির কন্টেন্ট।

ব্যাবসায় সুফলের সাথে সাথে ২০১০ সালে নেটফ্লিক্স পা রাখে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে। নেটফ্লিক্সের বিচরণ যেন সবটা জুড়েই। বড় বড় সব স্টুডিও নির্দ্বিধায় তাদের সিনেমা এবং টিভি-সিরিজের সত্ত্ব বিক্রি করে যাচ্ছে নেটফ্লিক্সের কাছে। দর্শকদের এতো আগ্রহ দেখে তখন হুট করে রিডের মাথায় চেপে বসে নিজস্ব কনটেন্ট বানানোর ‘ভূত’।

যেই কথা, সেই কাজ! ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যায়ে তৈরি হয় 'হাউজ অব কার্ডস' টিভি সিরিজটি। আর সেই সাথেই যেন আসে এক আমূল পরিবর্তন।



“নেটফ্লিক্স অরিজিনাল”-এর মাধ্যমে স্ট্রিমিং সার্ভিসের পাশাপাশি একটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে নেটফ্লিক্স। নেটফ্লিক্সের আয়ের প্রধান উৎস হলো এর সাবস্ক্রাইবাররা। ৭ থেকে ২০ ডলারের যে মাসিক ফি, তা থেকেই আসে নেটফ্লিক্সের মূল আয়। ২০২১ সালে যা ছিল ৩০ বিলিয়ন ডলার। সুতরাং সাবস্ক্রাইবার যত বাড়বে, আয়ও তত বাড়বে।

সাবস্ক্রাইবার বাড়াতে বা ধরে রাখতে হলে ভালো মানের কনটেন্টের কোনো বিকল্প নেই। কেননা, নিজেদের তৈরি সিনেমা বা সিরিজগুলো নেটফ্লিক্স ছাড়া আর কোনো প্লাটফর্মে দেখতে পারবে না দর্শক।

এছাড়াও আরো একটা উদ্যোগ নেয় নেটফ্লিক্স। ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হাউজ কার্ডসে’র প্রথম সিজনের সবকটি এপিসোড একই সঙ্গে আপলোড করা হয়েছিল নেটফ্লিক্সের ওয়েবসাইটে। প্রতি সপ্তাহে একটি এপিসোড মুক্তি দেওয়ার রীতি থেকে বের হয়ে দর্শকদের এক বসায় পুরো সিজন দেখার সুযোগ করে দেয় নেটফ্লিক্স। আর নেটফ্লিক্সের এই রীতিকে বলা হয় ‘বিঞ্জ ওয়াচিং’। তবে ২০১৫-১৬ সাল পর্যন্ত নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয়তা দেখে বিনোদন জগতের হর্তাকর্তারা বুঝতে পারেন, যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে পারলে টেলিভিশনের ভবিষ্যৎ হয়ে যাবে শুধুই নেটফ্লিক্স।

বর্তমানে বিশ্বের ১৯০টিরও বেশি দেশে স্বগৌরবে চলছে নেটফ্লিক্স। তবে নেটফ্লিক্সের প্রতিদ্বন্দী হিসেবে আমাজন প্রাইম, এইচবিও ম্যাক্স, ডিজনি প্লাসও বৈশ্বিক বাজারে বিস্তৃতি লাভ করতে শুরু করে।



জরিপ অনুযায়ী জানা যায়, মার্কিনিরা এখন টিভির চাইতে স্ট্রিমিং সাইটগুলোতে বেশি সময় ও অর্থ ব্যয় করে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র না, বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই ধীরে ধীরে টিভির স্থান দখল করছে স্ট্রিমিং সাইটগুলো। আর এসব কারণে টিভি চ্যানেলগুলোও খুলছে নিজেদের স্ট্রিমিং বা ওটিটি প্লাটফর্ম।

আমাদের দেশেও কিন্তু দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে স্ট্রিমিং প্লাটফর্মগুলো। ভারতে হটস্টার, হইচইয়ের সাফল্যের পর বাংলাদেশেও আত্মপ্রকাশ করে বঙ্গ, বায়স্কোপ, চরকির মতো স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম।

পরিবর্তনশীল এই বাজারে মিডিয়ার ভবিষৎ কোথায় যাবে, সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তবে, নেটফ্লিক্সের সেই উদ্যোগের কারণে আমাদের বিনোদন গ্রহণের মাধ্যম যে চিরতরে বদলে গেছে, তা নিশ্চিত করেই বলে দেওয়া যায়। বৈপ্লবিক এই পরিবর্তন আসলে আমাদের জন্য কতটা সুখকর?

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!