আপনারা কি জানেন, ১৯৮৭ সালে ক্রিকেট থেকে রিটায়ার করেছিল ইমরান খান? তাহলে পাকিস্তান তার অধিনায়কত্বে ১৯৯২ বিশ্বকাপ জিতলো কি করে? বলছি। বিশ্বকাপের এমনই ১০ টি সুপার ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট নিয়েই কথা বলবো আজকে।
নাম্বার টেন – ওয়েস্ট
ইন্ডিজ ছাড়া বিশ্বকাপ
ক্রিকেট বিশ্ব প্রথমবারের মতো
দেখতে যাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজবিহীন বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন
এই দেশ একসময় ক্রিকেট ময়দানে রাজ করেছে। স্যার ভিভ রিচার্ডস, ব্রায়ান লারা, গ্যারি
সোবার্স, ক্লাইভ লয়েড, ক্রিস গেইল, ডিজে ব্রাভো, ম্যালকম মার্শাল, কোর্টনি ওয়ালশসহ
অসংখ্য দাপুটে ক্রিকেটারের জন্ম দেওয়া ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এখন ক্রিকেট বিশ্বে
ধুঁকতে থাকা এক দল। আগামী বিশ্বকাপে কি তারা কোয়ালিফাই করতে পারবে? এটাই এখন বড় এক
প্রশ্ন!
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
নাম্বার নাইন –
বিশ্বকাপের প্রথম হিট উইকেট
ক্রিকেট মাঠের আউটগুলোর মধ্যে
সবথেকে রেয়ার হচ্ছে হিট উইকেট। সবথেকে আনফর্চুনেটও বটে। তার উপরে যদি ছক্কা মেরে
কেউ হিট আউট হয়, তাহলে তার দুঃখ রাখার জায়গাই থাকার কথা না। লাস্ট এশিয়া কাপে আমরা
দেখেছিলাম মুজিব উর রহমানের সাথে এরকম ঘটনা ঘটেছিল। বিশ্বকাপের সর্বপ্রথম হিট
উইকেটের সাথেও জড়িয়ে আছে একইরকম ঘটনা। ১৯৭৫ বিশ্বকাপে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান রয়
ফ্রেডেরিকস বাউন্সার বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে পড়েন স্ট্যাম্পের
উপরে। বল সীমানা পেরিয়ে গেলেও বেচারা তাই আউট হয়ে যায়। ক্রিকেট দুনিয়াও প্রথমবারের
মতো বিশ্বকাপে দেখে বিরলতম এক ঘটনা।
নাম্বার এইট – ছেলেদের
আগে হয়েছে মেয়েদের বিশ্বকাপ!
ছেলেদের ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার
ধারে-কাছেও নেই মেয়েদের ক্রিকেট। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে আপনি এই ফ্যাক্টটি জানলে
অবাক হবেন। ছেলেদের বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে শুরু হয়েছে মেয়েদের বিশ্বকাপ! ১৯৭৫
সালে প্রথম দেখা যায় ছেলেদের ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজন করতে। কিন্তু এর দুই বছর আগে
১৯৭৩ এই প্রথমবার অনুষ্ঠিত হয় মেয়েদের বিশ্বকাপ!
নাম্বার সেভেন – এক
বলও না খেলে গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচ জয়!
বিশ্বকাপ ইতিহাসে শ্রীলঙ্কাই
একমাত্র দল যারা গ্রুপ পর্বের দুটো ম্যাচের এক বলও না খেলে জিতেছে। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে
সিকিউরিটি রিজনে শ্রীলংকার পর্বের খেলাগুলোতে ট্রাভেল করতে আপত্তি জানায়
অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিয়ম অনুযায়ী শ্রীলঙ্কাকে জিতিয়ে দেওয়া হয়। এরথেকে
আরামের জয় আর কি হতে পারে। অ্যাজ এ রেজাল্ট, শ্রীলংকাও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের
রাউন্ডে উঠে।
নাম্বার সিক্স –
তিনবার ফাইনাল খেলেও বিশ্বকাপ জিততে পারেন নি যিনি
তিনবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেও
ট্রফি উচিয়ে ধরা হয় নি একবারও! ভাবা যায়! এমনই এক অভাগা ক্রিকেটারের নাম গ্রাহাম
গুচ। ইংলিশ এই ক্রিকেটারই ১৯৭৯, ১৯৮৭ ও ১৯৯২ বিশ্বকাপ ফাইনালে হারা ইংল্যান্ড দলের
একমাত্র সদস্য। তিনটি বিশ্বকাপেই ফাইনালে হারে তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া ও
পাকিস্তানের কাছে।
নাম্বার ফাইভ – ২০১১
ফাইনালে টস বিতর্ক
২০১১ এর ফাইনালে একটি বিরাট
বিতর্কের মুখে পড়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে আইসিসি। ফাইনাল শুরু হওয়ার আগে দুই দলের
ক্যাপ্টেন ধোনি ও সাঙ্গাকারা টস করার জন্য মাঠে আসেন। ধোনি কয়েন নিয়ে টস করেন।
অন্যদিকে কল করার কথা ছিল সাঙ্গাকারার। কিন্তু ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রো তার কল শুনতে
পায় না। যার ফলে সে টসে জিতলেও আরো একবার করতে হয় সেই টস। ভাগ্যিস সেইবারেও সাঙ্গাকারাই
টস জিতে। নইলে ভারত, সেই ম্যাচ রেফারি ও আইসিসি ব্যাপক মাত্রায় তোপের মুখে পড়তো।
নাম্বার ফোর – ফেয়ার
প্লে দেখাতে গিয়ে হেরে যাওয়া ম্যাচ!
১৯৮৭ এর আসরে মজাদার একটি ঘটনা
ঘটে। ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ডিন জোনসের শট বাউন্ডারি থেকে ঠেকায়
রবি শাস্ত্রী। শাস্ত্রী আম্পায়ারকে ইশারা করে জানায় যে সেটি ছক্কা হয় নি, চার
হয়েছে। আম্পায়ারও সেই সিদ্ধান্তই জানিয়ে দেয়। কিন্তু বাগড়া বাঁধায় ডিন জোনস। তিনি
ছক্কা দেওয়ার জন্য আবেদন করেন। আম্পায়ার তখন ভারতীয় ক্যাপ্টেন কাপিল দেভের কাছে
ডিসিশন চায়। ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিত কাপিল জোনসকে ছয় দিয়ে দেয়। কিন্তু আসল টুইস্ট
আসে ম্যাচের শেষে, যখন মাত্র এক রানে ম্যাচ হেরে যায় ভারত। কাপিল তখন ছয় দিতে রাজি
না হলে ম্যাচটি জিতে যেত ভারত!
নাম্বার থ্রি – কোন
ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচ না খেলেই বিশ্বজয়ীদের তালিকায় নাম!
ভারতীয় ক্রিকেটার সুনীল ভালসন ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলেই পেয়েছেন বিশ্বজয়ীর তকমা। ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন তিনি। কিন্তু সেই বিশ্বকাপে কিংবা এর আগে-পরে জীবনেও কোন ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচে ভারতের জার্সি গায়ে নামার সৌভাগ্য হয় নি তার!
নাম্বার টু – এয়ারফোন
নিয়ে মাঠে নেমে খেলেন ধরা!
১৯৯৯ বিশ্বকাপে দেখা যায় আরেক
মজার ঘটনা। ভারতের সাথে ম্যাচে সাউথ আফ্রিকার দুই ব্যাটসম্যান হান্সি ক্রোনিয়ে ও
অ্যালান ডোনাল্ড ব্যাট করতে নামেন এয়ারফোন কানে দিয়ে। যাতে করে মাঠে থেকেই কোচের
সাথে যোগাযোগ রাখতে পারেন। অভিনব আইডিয়া কাকে বলে! কিন্তু ব্যাপারটা লক্ষ করে
আম্পায়ারের কাছে ফাউল প্লের আবেদন করেন ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। এরপরে
আম্পায়ার তাদের সেই এয়ারফোন উইথড্র করেন।
নাম্বার ওয়ান – অবসর
ভেঙ্গে ফিরে এসে দেশকে জেতালেন প্রথম বিশ্বকাপ
পাকিস্তানি কিংবদন্তি ক্রিকেটার
ইমরান খান ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন ১৯৮৭ বিশ্বকাপের পরে। পাকিস্তান দলের বাজে
অবস্থার কারণে এক বছর পরেই পাকিস্তানের সেই সময়কার প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়া-উল-হক
তাকে রিকুয়েস্ট করে ক্যাপ্টেন হিসেবে পাকিস্তান দলে ফিরে আসার জন্য। ফিরেও আসেন
ইমরান খান। ১৯৯২ বিশ্বকাপে ক্যাপ্টেন্সি ও পারফর্ম্যান্স দুই দিক দিয়েই দলকে
নেতৃত্ব দিয়ে উপহার দেন প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফি। ৩৯ বছর বয়সে উইনিং উইকেটটাও তিনি
নিজেই তুলে নেন।