বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ও শক্তিশালী নৌযান হিসেবে বিবেচনা করা হয় নিউক্লিয়ার সাবমেরিনকে। বর্তমানে বিশ্বের ছয়টি দেশের নৌবাহিনীর কাছে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন আছে। এরমধ্যে ইউএসের ৬৮ টি, রাশিয়ার ৩১ টি এবং চীনের আছে ১২ টি সাবমেরিন।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
নিউক্লিয়ার সাবমেরিন বা পারমাণবিক শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ এক ধরনের সাবমেরিন যেগুলো পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করে চলে। এগুলোতে থাকে পারমাণবিক শক্তি উৎপন্ন করার জন্য রিঅ্যাক্টর, যাতে উৎপন্ন হয় বিপুল পরিমাণ শক্তি। মোটামুটি একটা বড় আকারের সাবমেরিনে যে পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয় তা দিয়ে একটা আধুনিক শহর অনায়াসে চলতে পারে।
বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ও
শক্তিশালী নৌযান হিসেবে বিবেচনা করা হয় নিউক্লিয়ার সাবমেরিনকে। কারণ
ডুবোজাহাজগুলোর রয়েছে উচ্চ গতি ও শত্রু দেশের নজর এড়িয়ে গোপনে যাতায়াত করার
ক্ষমতা। পাশাপাশি জ্বালানি ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে পানির নিচে ডুবে থাকতে পারে
সাবমেরিনগুলো। বর্তমানে বিশ্বের ছয়টি দেশের নৌবাহিনীর কাছে পারমাণবিক সাবমেরিন
রয়েছে। দেশগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য
ও ভারত।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট
ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক শক্তিচালিত
সাবমেরিনের মালিক যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির হাতে রয়েছে ৬৮টি পারমাণবিক শক্তিচালিত
সাবমেরিন।
এ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের
পরেই রয়েছে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ রাশিয়া। প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়ায়
মোট ৩১টি পারমাণবিক সাবমেরিন রয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি
নিজেদের নৌশক্তি বাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পুতিনের দেশ। আর সেই কারণেই তারা
ডুবোজাহাজ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। বর্তমানে পারমাণবিক
ডুবোজাহাজের সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে চীন। দেশটি ১২টি
পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিনের মালিক। ১১টি পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন নিয়ে
চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। ফ্রান্সের কাছে রয়েছে মোট ৯টি পরমাণু
শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ। অর্থাৎ এই দিক থেকেই যুক্তরাজ্যের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে
দেশটি। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হয়েও তালিকার ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে ভারত। দেশটির কাছে মাত্র
একটি পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ রয়েছে।
ভারতের নৌবাহিনী সাবমেরিন
সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টায় রয়েছে বলে সূত্রে জানা যায়। ভারতের পর এ তালিকায় আর কোনো
দেশ নেই।
এ তালিকায় সপ্তম স্থানে নাম
লেখাতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। জানা যায়, শিগগিরই
অস্ট্রেলিয়া নিজেদের হাতে পেতে চলেছেন পারমাণবিক সাবমেরিন।
ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয়
অঞ্চলে চীনের সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যেই
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে চুক্তি হয়েছে। আর
সেই চুক্তির ভিত্তিতেই পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ পেতে চলেছে অস্ট্রেলিয়া।
সব ঠিক থাকলে যুক্তরাষ্ট্র ও
যুক্তরাজ্যে সঙ্গে করা চুক্তির কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার হাতে পাঁচটি
সাবমেরিন আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার এই চুক্তি নিয়ে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়েছে ফ্রান্স। এ চুক্তির
কারণে ফ্রান্সের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার তীব্র মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। বাতিল হয়ে গেছে
দেশ দুটির মধ্যে সম্পাদিত মাল্টিবিলিয়ন ডলারের চুক্তি। চুক্তির আওতায় অস্ট্রেলিয়ার
জন্য ১২টি পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরির কথা ছিল ফ্রান্সের। ব্যাপক ক্ষুব্ধ
ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে নিজের রাষ্ট্রদূতদের ডেকেছে আলোচনার
জন্য। দেশটি নতুন এ চুক্তি মোটেও ভালোভাবে নেয়নি। কারণ এতে আর্থিকভাবে বড় ধরনের
ক্ষতির মুখে পড়বে ইউরোপের দেশটি।
সামরিক অস্ত্রের ইতিহাসে
বিবর্তন আসার পর থেকে বিশ্বের সব দেশ নিজেদের শক্তি বাড়াতে শুরু করেছে। জলপথে
শত্রুদের ঠেকাতে নৌশক্তি বৃদ্ধি করার দিকেও মন দিয়েছে অনেক দেশ। আর সেই শক্তি
বাড়াতেই একের পর এক পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজের সংখ্যা বাড়াচ্ছে দেশগুলো।
অনেকেই মনে করেন নিউক্লিয়ার
সাবমেরিন মানেই নিউক্লিয়ার বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিন কিন্তু আসলে তা নয়।
নিউক্লিয়ার সাবমেরিনে পারমাণবিক বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্র থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে
পারে। মূলত এর চালিকাশক্তি হিসেবে পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহৃত হয় তাই এর নাম
পারমাণবিক সাবমেরিন ।
একটি বিশাল আকারের পারমাণবিক
সাবমেরিন সর্বোচ্চ ২৫ বছর পর্যন্ত কোনো জ্বালানি ছাড়াই চলতে পারে। কারণ একই
পারমাণবিক জ্বালানি বারবার পরিশোধন এবং ব্যবহার করা যায়।
পারমাণবিক সাবমেরিন আকারে
সাধারণত ডিজেল চালিত সাবমেরিন থেকে অনেক বড় হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাবমেরিন হল
রাশিয়ার টাইফুন ক্লাস সাবমেরিন। একটা সাবমেরিন প্রায় ২০টি আন্তমহাদেশীয়
ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে। একটি সাবমেরিন একাই মিসাইল হামলা চালিয়ে প্রায় ২০০
শহর গুড়িয়ে দিতে পারে।